আইন ও অধিকারজাতীয়রাজনীতি
বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন- মন্ত্রীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বিদেশ যান, খালেদা জিয়া কেন পারেন না?
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৯ সালে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামের জাতীয় এই কমিটি গঠন করে বিএনপি।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, অনির্বাচিত বলে এ সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই। এখন অপরাধ করলে কারও শাস্তি হয় না। চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারে বাধা দিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় নজরুল ইসলাম সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অসুস্থ হলে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা হয়। বিদেশে গিয়ে মন্ত্রীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। অথচ খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হয়।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, যে দেশে ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে কথা বলার কোনো অধিকার থাকে না। নানাভাবে নারী নিগৃহীত হচ্ছেন। আইনের শাসন না থাকায় দুর্বলের ওপর অত্যাচার বাড়ছে। সরকার দ্রব্যমূল্য বাড়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের অজুহাত দিচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাব এত তাড়াতাড়ি বাজারে পড়বে না। আসলে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তাজমেরী ইসলাম বলেন, সমাজের সব স্তরে আজ পচন ধরে গেছে। বিএনপির সময়ে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে যারা সোচ্চার হয়েছিল, তারা আজ কথা বলে না। অথচ দেশে এখন নতুন নতুন মাত্রায় ধর্ষণ হচ্ছে। বিচারকর্তা বিচার করার আগে শাসকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কারণ অপরাধের পেছনে ছাত্রলীগ বা সরকারের লোক থাকে।
সভায় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা। মূল প্রবন্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদের নারী নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয় ৮ হাজার ১৩৭ নারী। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫০ হাজার ৬৫৯ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৯ হাজারের বেশি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে ৩ হাজার ৪৪০ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, দেশ আজ সংকটে। সুশাসন ও ন্যায়বিচার নেই। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন বাড়ছে। সভায় আরও বক্তব্য দেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য মীর সরফত আলী সপু, বিলকিস ইসলাম, ফরিদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ প্রমুখ।