আন্তর্জাতিকখেলাধুলাজাতীয়বিনোদন
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরে সিরিজ জেতা হলো না বাংলাদেশের
অনেক প্রাপ্তির হিসেব মেলাতে শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। ছোট সংস্করণে মুখোমুখি দেখায় আফগানদের বিপক্ষে ৩-৪ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল টাইগাররা। আজ সুযোগ ছিল এ ম্যাচ জিতে সমতা ফেরানোর, তবে উল্টো বেড়ে গেল ব্যবধান। সুযোগ ছিল আফগানদের হারিয়ে তাদের টপকে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ৮ নম্বরে উঠে আসার, হলো না সেটিও।
আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৬১ রানে জয়ের পর এ ম্যাচ জিতলে দুই দলের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রথমারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ পেত বাংলাদেশ। মুশফিকের রহিমের ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আক্ষেপই বাড়ল শুধু। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে মাত্র ১১৫ রান তোলে স্বাগতিকরা। ১১৬ রানের জবাব দিতে বেগ পেতে হয়নি সফরকারীদের। ৮ উইকেট আর ১৪ বল হাতে রেখে ম্যাচ জেতে আফগানরা।
এ ম্যাচ জয়ের ফলে দুই ম্যাচ সিরিজ শেষ হলো ১-১ ব্যবধানে। এতে টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
এ ম্যাচ হারের জন্য যেমন কাঠগড়ায় ব্যাটসম্যানরা, তেমনি সহজ ক্যাচ ছেড়ে সে ব্যর্থতায় ভাগ বসিয়েছেন ফিল্ডাররা। নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন, নাঈম শেখরা ছেড়েছেন সহজ ক্যাচ। হাফ চান্স হাতছাড়া হয়েছে আরো দুটি। ক্যাচ মিসের মহড়ায় ম্যাচ জিততে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি আফগানিস্তানের। হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের ফিফটির সঙ্গে দুই ব্যাটসম্যান উসমান ঘানির ৪৭ রানের সুবাদে ৮ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আফগানিস্তান।
অথচ ইনিংসের শুরুতেই দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় বলে নাসুম আহমেদকে খেলতে গিয়ে অনেক উঁচুতে বল তুলে দেন জাজাই। অনেক সময় পেয়েছিলেন নাসুম। বলের নিচেও গিয়েছিলেন কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফস্কে যায় ক্যাচ। সুযোগ পেয়ে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজে যেমন অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন জাজাই, তেমনি তার ব্যাটেই সিরিজ বাঁচিয়েছে আফগানিস্তান।
ইনিংসের প্রথম ওভারে জাজাইকে ফেরানো না গেলেও পরের ওভারে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। শেখ মেহেদী হাসানের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ৫ বলে ৩ রানে সাজঘরে তিনি। এরপর একাধিক সুযোগ পেয়ে দলকে টেনে তোলেন জাজাই আর ঘানি। দ্বিতীয় উইকেটে দুই জন গড়েন ৯৯ রানের জুটি। এই জুটিতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ দল।
শেষদিকে সুযোগ পেয়েও অবশ্য ফিফটি করতে পারেননি ঘানি। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে ৫টি চার আও ১ ছয়ে ৪৮ বলে খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। অন্যপ্রান্তে অর্ধশতকের স্বাদ পান জানাই। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪৫ বলে ৫৯ রানে। ৩টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা হাঁকান তিনি। সঙ্গে দারউইশ রাসুলির ৮ বলে অপরাজিত ৯ রানের কল্যাণে ৮ উইকেটের বিশাল জয় পায় আফগানরা। বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী আর মাহমুদউল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ওভারে ব্যাট থেকে কোনো রান নিতে পারেননি মুনিম। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের খেতাব পেয়ে জাতীয় দলের টিকিট পাওয়া এই ওপেনার রানের জন্য হাপিত্যেশ করতে থাকেন, যদিও বাউন্ডারিও পেয়ে যান ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। আগের ম্যাচের মতো এদিনও চার দিয়ে রানের খাতা খোলেন মুনিম।
মুনিমের ব্যাটিংয়ের ধরন বেশ ভালোভাবেই পড়ে ফেলেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী। ওই চার রানেই প্যাভিলিয়নে মুনিম। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছোটানো লিটন দাস এদিও ব্যাটিং ঝড়ের বার্তা দেন ফারুকিকে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মেরে। তবে সেই ইনিংসটি বড় করতে পারেননি লিটন। আজমতউল্লাহর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ১৩ রানে। ১০ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি ওই একটিই।
দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ার-প্লেতে ৩৩ রান তোলে বাংলাদেশ দল। নাঈম তখনো উইকেটে। সুযোগ পেয়ে আজও ইনিংস বড় করতে পারেননি, টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংয়ে উল্টো দলের উপর চাপ বাড়াতে থাকেন। ইনিংসের নবম ওভারের শুরুর বলে করিম জানাতের দুর্দান্ত এক থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
সতীর্থ সাকিব আল হাসানের দিকে তাকালে নাঈম অবশ্য কিছুটা স্বস্তি পাবেন। ব্যাট হাতে বাঁহাতি সাকিবের ফর্মটাও পড়তির দিকে। এ ম্যাচেও ব্যর্থ সাকিব। আগের ম্যাচে ৬ বলে ৫ করে আউট হয়েছিলেন তিনি। আজ সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। যেখানে ৬০ স্ট্রাইক রেটে ১৫ বল খরচ করলেও কোনো বাউন্ডারি নেই তার ব্যাটে। ১০ ওভারে ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে মহা বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল।
সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। পঞ্চম উইকেটে দুজন গড়েন ৪৩ রানের জুটি। তাদের জুটিতেই ইনিংসের ১২তম ওভারে এসে ৩৮ বল পর বাউন্ডারির সন্ধান পায় স্বাগতিক শিবির। দলের পড়তি রান তুলতে গিয়েই বিপত্তি বাধে। ইনিংসের ১৫তম ওভারে রশিদ খানে কাটা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৩ চারে ১৪ বলে করেন ২১ রান।
৪৩ রানের জুটি ভাঙার পর সঙ্গীর পথ অনুসরণ করেন মুশফিকও। পরের ওভারেই সাজঘরে তিনি। ফারুকির দ্বিতীয় শিকার হন ২৫ বলে ৩০ রানে। যেখানে তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি চারের মার। একই ওভারে শেখ মেহেদীকে ফেরান আজমতউল্লাহ। এদিন রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। আফিফও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলে বড় রানের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের।
শেষদিকে মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ বলে ৬ এবং নাসুম আহমেদের ৯ বলে অপরাজিত ৯ বলে ৫ রানের কল্যাণে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১১৫ রানে থামল বাংলাদেশের ইনিংস। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। এই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় এড়াতে সফরকারী আফগানদের প্রয়োজন ১১৬ রান। আফগানদের হয়ে ফারুকি আর আজমতউল্লাহ সমান ৩টি করে উইকেট নেন।