আইন ও অধিকারনারায়ণগঞ্জরুপগঞ্জ

অবাধ্য সন্তানদের কবল থেকে বাঁচতে অসহায় বৃদ্ধ পিতার আকুতি

অবাধ্য ৯ সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচতে মোঃ সাইজুদ্দিন মিয়া নামে অসহায় এক বৃদ্ধ শিল্পপতি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে অসহায় সাইজুদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আকুতি জানান। অবাধ্য সন্তানরা ভাড়া করা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা চালিয়ে সাইজুদ্দিনকে বেধড়ক মারধর, তার দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখির হাত এবং ছেলে আতিকুল ইসলাম শান্তর পা ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়া বাসার কাজের মেয়ে শাহিনুর আক্তারকে মারধরের কারণে তার বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বাবা, সৎ মা ও সৎ ভাইকে মারধর করে এক ঘরে বন্দি করে রাখে। পরে জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ‘৯৯৯’-এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনস্থল রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকার বাড়িতে গিয়ে গুরুতর আহত সাইজুদ্দিনসহ তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। বর্তমানে জীবনের নিরাপত্তার কারণে রূপগঞ্জের নিজ বাড়িতে না থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি।

 

সংবাদ সম্মেলনে সাইজুদ্দিন মিয়া অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখি। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, প্রয়াত প্রথম স্ত্রীর গর্ভের ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ে সম্পত্তি লিখে দিতে শিল্পপতি সাইজুদ্দিন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখি এবং দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র ছেলে আতিকুল ইসলাম শান্তকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে।

৮৮ সালে শিল্পপতি সাইজুদ্দিন মিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ৯১ সালে আঁখিকে তিনি বিয়ে করেন। এ সংসারে তার একটি ছেলে একমাত্র রয়েছে। রূপগঞ্জের কাঞ্চনে সাইজুদ্দিন মিয়ার ‘ সাইজুদ্দিন ও শান্ত টেক্সটাইল’ নামে দু’টি কাপড়ের মিল রয়েছে।

তবে প্রথম পক্ষের ৩ ছেলের কেউই বাবার বাধ্য সন্তান নয়। প্রথম পক্ষের সন্তানরা সাইজুদ্দিনের টাকা বিপথে খরচ করেন। বাবার ব্যবসা দেখাশুনা বা তাকে কোন ধরণের সহযোগিতা করেন না। একারণে প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েদের উপর সাইজুদ্দিন মিয়ার অভিমান রয়েছে। একই বাউন্ডারীর ভেতরে পৃথক বাড়িতে বসবাস করেন সাইজুদ্দিন ও তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, সাইজুদ্দিন মিয়ার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি প্রথম পক্ষের সন্তানদের লিখে দিতে বার বার তাকে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এজন্য গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সন্তানদের হুমকির কারণে আদালতে ৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা করে বাসায় ফেরার পরেই প্রথম পক্ষের ৩ ছেলে রফিকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম বাবু, শাহজাহান মিয়া, মেয়ে রাহিমা আক্তার  ও শাহারা আক্তার ডেইজী এবং ৩ ছেলের স্ত্রী একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়। তারা সাইজুদ্দিন মিয়াকে বেধড়ক মারধর করে, তার দ্বিতীয় স্ত্রী আঁখিকে মারধর করে ডান হাত এবং ছোট ছেলে শান্তর পা ভেঙ্গে ফেলে। মারধর শেষে তাদের এক ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। তারা ‘৯৯৯’ এ ফোন দিলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। তাদের উদ্ধার করে রূপগঞ্জ থানার ইউএনও’র কাছে নিয়ে যায়। সব ঘটনা শুনে ইউএনও তাদের নিরাপদ স্থানে যাবার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর তারা সিদ্ধিরগঞ্জে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন। নিরাপত্তার কারণে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করতে না পেরে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলাটি যথাযথ ভাবে তদন্ত না করেই রূপগঞ্জ থানার এস আই সিরাজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যে কারণে হামলাকারীরা দ্রæত জামিন পেয়ে যান। আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন সাইজুদ্দিন মিয়া। নারাজির প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

সাইজুদ্দিন মিয়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে প্রথম পক্ষের সন্তানরা ঘরে থাকা সিন্দুক ভেঙ্গে দলিলপত্র, এনআইডি কার্ড এবং ব্যাংকের চেক বইসহ জরুরি কাগজপত্র নিয়ে যায়। এমনকি দুই মিলে উৎপাদিত ২ কোটি টাকা মুল্যের কাপড় বাজারে মাত্র ১ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে অবাধ্য ওই সন্তানদের কব্জায় তার দুইটি মিলসহ স্থাবর সম্পত্তি গুলো রয়েছে।

সাইজুদ্দিন মিয়া আরও বলেন, প্রথম পক্ষের সন্তানরা সম্পত্তি বাটোয়ারা করতে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলির দ্বারস্থ হন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা কলিকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে সন্তানদের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সম্পত্তি বাটোয়ারা করে দেবেন। কিন্তু তার আগেই গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তাকে ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান শান্তর উপর হামলা করে।
পিতার উপর হামলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে সাইজুদ্দিন মিয়ার বড় ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করে স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলতে বলে ফোন কেটে দেন।

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিল্পপতি সাইজুদ্দিন মিয়ার প্রথম পক্ষের সন্তানরা নিজেদের ভোগ বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে শুধু টাকা উড়ায়। তারা বাবার ব্যবসা দেখা শোনা বা কোন সহায়তা করেন না। এ কারণে সাইজুদ্দিন মিয়া প্রথম পক্ষের সন্তানদের উপর একটু রাগ। অপর একটি সূত্র জানায়, ২০ বছর আগে তার বড় ছেলে রফিক ৭ লাখ টাকা চুরি করে বাড়ি থেকে পালায়। এভাবে তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা শুধু টাকা পয়সা নষ্ট করে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার এসআই ও সাইজুদ্দিন মিয়ার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সিরাজ বলেন, আমি মামলাটি তদন্ত করে গত মাসেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে দিয়েছি।

কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলি বলেন, শিল্পপতি সাইজুদ্দিন মিয়ার সঙ্গে তার প্রথম পক্ষের সন্তানদের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ওয়ারিশ হিসেবে বাবার কাছ থেকে সম্পদ পেতে তারা আমার দ্বারস্থ হয়েছিল। আমি বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে সাইজুদ্দিন মিয়ার সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিষয়টির সুরাহা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা একটি মাস সময় অপক্ষো করতে পারেনি। এর আগেই তারা বাবার উপর হামলা করে বসে। ঘটনাটি দুঃখজনক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close