আইন ও অধিকারজাতীয়ঢাকাস্বাস্থ্য বার্তা

রামপাল নিয়ে ১৩টি গবেষণার তথ্য দিয়েও সাড়া পাইনি: সুলতানা কামাল

বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনঘেঁষা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষতি সম্পর্কে সরকারের প্রতিনিধির কাছে ১৩টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ জমা দিলেও দুই বছরে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল।

রামপালের প্রকল্পটি নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম আজাদের কাছে প্রবন্ধগুলো দিয়ে খোলাখুলি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’ শীর্ষক বাপা-বেন বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ তুলে ধরেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এই সম্মেলন আয়োজন করেছে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের প্রতি অভিযোগ— আমরা পরিবেশবিদ নই, পরিবেশবাদী। আমরা আবেগ দিয়ে কথা বলি। কিন্তু সরকারের কাছে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। আমাদের ডেকে বলুক, আমরা কোথায় আবেগ দিয়ে কথা বলেছি? বললে তখন আমরা মেনে নেব।

এর আগে সূচনা অনুষ্ঠানের কি-নোট স্পিকার বাপা’র সহ-সভাপতি ও বেন-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম সম্মেলনের আলোচ্য ১১টি বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, সরকার উন্নয়ন সংস্থা ও রাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিলেও দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনতে চায় না। তারা বারবার করে নিজ উদ্যোগে পরামর্শ দিলেও সেটি অগ্রাহ্য করা হয়।

ড. নজরুল বলেন, দেশি বিশেষজ্ঞরা দেশের মানুষ, প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে ভাবে, যা বিদেশিদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। এভাবে বিদেশি পরামর্শে উন্নয়ন কার্যক্রম চলার ফলে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি গৌণ থেকে যাচ্ছে।

 

পরে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দীন মাহমুদ বলেন, পরিবেশের ওপর দেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রভাব নিয়ে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের চাহিদা থাকতে হবে। চাহিদা না থাকলে পরামর্শ দিয়ে লাভ নেই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য জ্বালানি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নগরায়ন ও শিল্পায়ন হতেই হবে। দেশ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য কিছুটা হুমকির মুখে থাকে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ‘রিসিভিং কান্ট্রি’ কিন্তু শিল্পোন্নত দেশগুলোর মতো দূষণকারী বায়ু অতটা নির্গমন করে না।

এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, সরকারের যদি জনগণের কাছে চাহিদা না থাকে, তাহলে কার কাছে থাকবে? তাদের যখন ভোটের চাহিদা থাকে, তখন আমাদের কাছেই আসে। তাদের ক্ষমতার উৎস জনগণ, সবকিছুর ভিত্তি জনগণ। তাই তাদেরও জনগণের চাহিদার প্রমাণ রাখতে হবে। নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। আমাদের বলা হচ্ছে— দেশ চলবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। কিন্তু কোন আদর্শে, সেটিও আমাদের বুঝতে হবে।

বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বাপা সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা গাছ লাগাইয়া সুন্দরবন পয়দা করি নাই। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রকৃতি একে করে দিয়েছে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য। বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে যে সুন্দরবন রয়েছে, এটা হলো ব্যারিয়ার। এটা যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও কুমিল্লার একটি অংশ, ঢাকার কিছু অংশ— একটি বিশাল এলাকা সাগরের বুকে চলে যাবে। এবং এগুলো হাতিয়া-সন্দীপের মতো আইল্যান্ড হয়ে যাবে। একবার যদি সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।’

সুলতানা কামাল বলেন, সুন্দরবন রক্ষা বিষয়ে ১৯৭২ সালে জাতীয় বৃক্ষরোপণ সপ্তাহের উদ্বোধনী বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এসব কথা বলেছিলেন। এসময় তিনি সভায় উপস্থিত পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রতি এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। কোটি ঘরে আলো জ্বলে উঠলে সেটি আমাদের মুখে হাসি ফোটালেও আমাদের মনে রাখতে হবে— সেই উন্নয়ন আমরা কীসের বিনিময়ে পাচ্ছি, সেই বিদ্যুৎ আমরা কিসের বিনিময়ে পাচ্ছি। তাছাড়াও একেকটি অঞ্চলের উন্নয়ন ধারণক্ষমতা কতটুকু, সে কথাও মাথায় রাখতে হবে। এর জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শের প্রয়োজন আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close