জাতীয়নারায়ণগঞ্জনির্বাচনী হালচালরাজনীতি

কে হাসবেন বিজয়ের হাসি? আইভী নাকি তৈমূর

বহুল আলোচিত নাসিক নির্বাচনের আজ ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও আলোচনায় হেভিওয়েট দুই প্রার্থী ডা. আইভী ও তৈমূর আলম। এরমধ্যে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী তার মার্কা নৌকা। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী তার মার্কা হাতি। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর দুই প্রার্থীই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন বিরতীহীনভাবে। দুজনেই নানা প্রতিশ্রুতি আর আশার বানী শুনিয়েছেন ভোটারদের। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন ভোটার আজ তাদের নগর মাতা বা নগর পিতা নির্বাচিত করবেন। ফলে কে হাসবেন সেই হাসি এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পুরো জেলা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে। যদিও ডা. আইভী বরাবরই বলেছেন তার বিজয় নিশ্চিত। অন্যদিকে তৈমূর আলমও শেষ সময়ে বলেছেন তিনিও লক্ষাধিক ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হবেন। তবে নগরবাসী বলছে দুইজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর তৈমূর আলমকে ভোট গ্রহণের কয়েক ঘন্টা আগে তার দল বসিয়ে দেয়ায় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১৬ সালে অবশ্য দল আইভীকে মনোনয়ন দেয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচন হয়েছিলেন আইভী। তৃতীয়বার মেয়র পদে  তিনি লড়ছেন। এদিকে তৈমূরকে ঘিরেও বিভিন্ন দল মত এক হয়েছে এবার। আইভী নিজেও বলেছেন তাকে পরাজিত করতে সব দল একজোট হয়েছে। ফলে ভোটের মাঠে কোন অঘটন ঘটে যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা সর্বত্র। কারণ প্রতিপক্ষের লোকজনকে গ্রেপ্তার, হুমকি-ধামকি, ভয়ভীতি সেই সন্দেহ বাড়িয়ে দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে।

সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কমিশন চায় নিজেদের শেষ সময়ে এসে একটি ‘ভালো নির্বাচন’ উপহার দিতে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জে আদালাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই, সবগুলো কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়েছে। ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে থাকবেন পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য। এছাড়াও আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। নির্বাচনে পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে ৬৪টি, প্রতি টিমে সদস্য থাকবেন পাঁচজন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৪ প্লাটুন সদস্য থাকবে। আরও অতিরিক্ত ৬ প্লাটুনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নাসিক নির্বাচনে র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ৩টি, চেকপোস্ট থাকবে ৬টি, টহল টিম থাকবে ৭টি। নির্বাচনে সহিংসতা রোধে ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পেনাল কোডের অধীনে তারা মামলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে নয়টি সংস্থার ৪২ জন পর্যবেক্ষককে অনুমতি দিয়েছে কমিশন। সংস্থাগুলো হলো- জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন এবং মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসূস।
প্রসঙ্গত ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close