জাতীয়পরিচিতি

জর্দা ব্যবসায়ী কাউছ মিয়া আবারও সেরা করদাতা হয়েছেন

তাঁর মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা। রংপুরে তামাক কিনে সেখানেই বিক্রি করেন। একবার তিনি আমদানির ব্যবসায় নামতে লাইসেন্স নিয়েছিলেন। এ ব্যবসায় কারসাজি না করলে টিকে থাকা মুশকিল, এটা চিন্তা করে আমদানির ব্যবসা ছাড়েন। বর্তমানে নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বেশ কিছু জাহাজ আছে কাউছ মিয়ার। এই ব্যবসা তাঁর ছেলেরা দেখাশোনা করেন।
গুলশান-বনানী কিংবা মতিঝিলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বার নেই কাউছ মিয়ার। পুরান ঢাকার আগা নওয়াব দেউড়ী রোডে হাকিমপুরী জর্দার কারখানার একটি কক্ষই তাঁর ‘চেম্বার’। মৌলভীবাজার থেকে সরু এই গলিপথ ধরে কিছুটা হাঁটলেই তাঁর কারখানা। সেখানেই বসেন তিনি। গুলশান, বনানী ও মতিঝিলের ডাকসাইটে ব্যবসায়ীদের পেছনে ফেলে পুরান ঢাকার ঘুপচি গলির এই ব্যবসায়ীই প্রতিবছর সর্বোচ্চ করদাতা হন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআরে) একাধিক কর্মকর্তা জানান, অন্য শ্রেণির সর্বোচ্চ করদাতারা প্রতিবছর কর হিসেবে যত টাকা দেন, তাঁরা কাউছ মিয়ার ধারেকাছে নেই।
আজ বুধবার জাতীয় ট্যাক্সকার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী ২০২০-২০২১ করবর্ষের জন্য সেরা করদাতা হিসেবে আজ বুধবার ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকার প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে এনবিআর।

কাউছ মিয়া প্রথম আয়কর দেন ১৯৫৮ সালে। এ নিয়ে ২০১৯ সালে এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আগে টাকাপয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে “ফ্রি” হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাবনিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম।’ ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১ নম্বর করদাতা হয়েছিলেন কাউছ মিয়া।

কাউছ মিয়ার বাবা চাইতেন না তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে নামেন। তাঁর বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। আর ব্যবসায় মন পড়ে থাকা কাউছ মিয়া ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দামামায় আর পড়াশোনা এগোয়নি। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদিদোকান দেন।

এরপর ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিলেন। পরের ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close