নারায়ণগঞ্জরাজনীতি

নারায়ণগঞ্জে শহিদ আমজাদ হোসেন স্মরণে শ্রমিক সমাবেশ

গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যূত্থান দিবস উপলক্ষে শহিদ গার্মেন্টস শ্রমিক আমজাদ হোসেন কামাল স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩ নভেম্বর) ফতুল্লা  বিসিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ এর পক্ষ থেকে শহিদ কামালের মৃত্যু স্থানে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও নারায়ণগঞ্জ শহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস টিইউসির কেন্দ্রীয় সভাপতি এডঃ মন্টু ঘোষ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হিমাংশু সাহা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আঃ হাই শরীফ, সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সম্পাদক আবু হাসান টিপু, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলার সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এইচ রবিউল চৌধুরী, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ জেলার সভাপতি সৈয়দ হোসেন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক অঞ্জন দাস, কাউসার হামিদ।

নেতবৃন্দ বলেন, ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন ও অভ্যুথান ছিলো স্বাধীনতার ইতিহাসের পর শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা। সেদিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্প নগরীতে প্যানটেক্স ড্রেস লিঃ এর শ্রমিকদের ৮ঘন্টা কর্মদিবস ওভার টাইমের দ্বিগুন মজুরিসহ ১৮ দফা দাবিতে আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালে আমজাদ হোসেন কামাল নিহত হন।

অন্তত অর্ধশত জন গুলিবদ্ধসহ কয়েকশ শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। ফলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিসিক থেকে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে। উত্তাল হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ। পরবর্তী ৩ দিন নারায়ণগঞ্জ অচল হয়ে যায়। ফলে রাষ্ট্র ও মালিক পক্ষ আন্দোলনে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ৮ ঘন্টা কর্ম দিবস, ওভার টাইমে দ্বিগুন মজুরি এবং দুই ঈদে দুই বোনাসসহ চুক্তি করতে বাধ্য হন।

কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিটিং ডাইং প্রিন্টং ও ম্যাকানিক সহ সকল কারখানায় ১২ ঘন্টা জেনারেল ডিউটি করা হয় শ্রমিকদেরঅ। আন্দোলনের মুখে সেদিন রাষ্ট্রপক্ষ ও মালিকপক্ষ দাবি দাওয়া মেনে চুক্তি করতে বাধ্য হলেও তারা ভিতরে ভিতরে আমজাদ হোসেন কামালের জীবন আর হাজার হাজার শ্রমিকের রক্তঝরা আন্দোলনে অর্জিত আধিকারটুকু তখন থেকেই নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে।

পরবর্তীতে সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় শ্রম আইন সংশোধনের নামে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী কালা কানুন যুক্ত করে তারা শ্রমিকদের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অধিকারগুলো দিন দিন কেড়ে নিচ্ছে। শ্রমিক ছাঁটাই, নির্যাতন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বহু আন্দোলনের পরেও বাচাঁর মত ন্যূনতম মজুরি এখনও নির্ধারিত হয়নি। নেই ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার।

এমনকি সেই অভ্যুত্থানের ১৯ বছর অতিবাহিত হলেও আমজাদ হোসেন কামাল হত্যার এখনো বিচার হয়নি। ইতিহাস স্বাক্ষী, শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সংগ্রাম ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই। ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর গার্মেন্টস শ্রমিক অভ্যুত্থান আমাদের সেই সংগ্রামেরই পথ দেখাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close