জেলা/উপজেলা

এএসপির আশ্বাসে শ্রীমঙ্গলে শ্রমিকদের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম স্থগিত

কে এস এম আরিফুল ইসলাম, ডিভিশনাল চিফ ইডিটর (বজ্রধ্বনি) ::

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে লাশবাহী যান আটকিয়ে পুলিশের অর্থ দাবী ও ড্রাইভারকে মারধরের ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ এর রুমে গাজীপুর রিজিওনের হাইওয়ে পুলিশ সিলেট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার ভুক্তভোগী পিকআপ ড্রাইভার শাকিবুল ইসলাম শাকিলকে গত শনিবারের ঘটনা নিয়ে একান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

পরে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাদা কথা বলেন। তবে সাংবাদিকদের সাথে আনুষ্ঠানিক কোন কথা না বললেও তিনি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে থানা থেকে বের হবার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও তদন্ত করেছি। বিষয়টি আরো যাচাই বাছাইয়ের পর একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী করে আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেব। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জোনের এসপি ও ডিআইজি স্যার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

তদন্তকালে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুস ছালেক, শায়েস্তগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. লিয়াকত আলী, ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নূর হোসেন,সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া, হবিগঞ্জ রোড সিএনজি গ্রুপের সভাপতি নূরুল ইসলাম ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা সিএনজি গ্রুপের সেক্রেটারী আলী আজগর, সহ-সম্পাদক সালাউদ্দিন উপস্থিত হন।

পরে আলাদাভাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলের লোকজন,সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই নান্নু মন্ডলসহ ফাঁড়ি পুলিশের অন্যান্য সদস্যদের বক্তব্য গ্রহণ করেন।

এদিকে রবিবার রাতে শহরের ভানুগাছ রোডস্থ ট্রাক ট্যাংকলরী কাভার্ডভ্যান পিকআপ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহনে এক অনির্ধারিত জরুরী যৌথ সভায় মিলিত হন। সভায় তারা এই তদন্ত কাজের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই নান্নু মন্ডলকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য হাইওয়য়ে পুলিশ প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টার সময় বেঁধে শহরে রাত ৮টায় মাইকিং করে আল্টিমেটাম দেন। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এই সময়ের মধ্যে দাবী মেনে নেয়া না হলে মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্ট কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এর পরই রাত ১১টারদিকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো.আব্দুস ছালেক এর নেতৃত্বে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে শ্রীমঙ্গল থানায় বৈঠকে বসেন। বৈঠকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করা পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট আগামী ১৯ জুনের মধ্যে পেশ করার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। এর পর শ্রমিক কর্মবিরতি স্থগিত করে শহরে পুনরায় মাইকিং করা হয়।

সভা শেষে পরিবহন শ্রমিক নেতা মো. শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি,অভিযুক্ত কর্তকর্তা নান্নু মন্ডলকে প্রত্যাহারে কোন প্রকার টালবাহানা করা হলে সাধারণ শ্রমিকরা তা মেনে নেবেন না’।

মৌলভীবাজার জেলার সার্কেল এএসপি মহোদয়ের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা ঘোষিত কর্মবিরতির আল্টিমেটাম স্থগিত করেছি।’

শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, ‘শ্রমিকদের কর্মবিরতির মাইকিং করার পর রাতে তাদের নেতৃবৃন্দকে ডেকে আমি থানায় বসেছিলাম। আমি শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের বলেছি,একটা জিনিস হইছে,আপনারা বলতেছেন একটা দাবী দাওয়া দিছেন হাইওয়ের এডিশনাল এসপি আসছে। উনি বিষয়টা তদন্ত করে গেছেন। রিপোর্ট দেয়ার তো সময় দিতে হবে। এরপর তো আপনারা দেখবেন কি হয়, রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন তো কোনো সমস্যার সমাধান নয়।’

উল্লেখ্য, গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত ড্রাইভারের লাশ একটি পিকআপ ভ্যানযোগে গাড়ী নং ঢাকা মেট্রো ন ১৫৭৩৮১ শ্রীমঙ্গলে নিয়ে আসার পথে মতিগঞ্জের বটেরতল নামক স্থানে পৌঁছালে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার অপরাধে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই নান্নু মন্ডল যানটি আটক করে। পরে চালক ও লাশের স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার ও মারধোর করে ৫ হাজার টাকা দাবী করেন বলে অভিযোগ করেছেন পিকআপ চালক। এ ঘটনায় ৩ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close