ঢাকা

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীর দাবিতে তামাকবিরোধী যুব সমাবেশ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত শক্তিশালী করা প্রয়োজন’ শীর্ষক তামাক বিরোধী যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই ) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চেীধুরী মিলনায়তনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূয়র-ডব়্প এর আয়োজনে, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, নারী মৈত্রী এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি, ঢাকা কলেজ, গভঃ বাংলা কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট’র চেয়ারম্যান ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৬৮% মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়, যার ৫১%–এর পেছনে তামাক অন্যতম প্রধান কারণ। ধূমপানের ফলে হৃদরোগ, ক্যানসার, স্ট্রোকসহ নানা মারাত্মক রোগ হয়। ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহারও আশঙ্কাজনকভাবে বেশি, যার পেছনেও তামাক বড় ভূমিকা রাখে। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি জরুরী।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাবির পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. খালেদা ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, পঙ্গুত্ববরণ করে বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ, এবং পরোক্ষ ধূমপানে শিকার ৪২.৭ শতাংশ। তাই, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে তামাকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতেই হবে।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডব়্ ‘র কোঅর্ডিনেটর জেবা আফরোজা।

উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

নাসরিন আক্তার ডলি, নির্বাহী পরিচালক, নারী মৈত্রী, বলেন, সম্প্রতি প্রাথমক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুদের উপর করা এক স্যালাইভা পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে উচ্চা মাত্রায় নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তরুণদের ধূমপান থেকে মুক্ত রাখতে তামাক কোম্পানি কূটকৌশলের মাধ্যমে যেন আইনের ফাঁক দিয়ে বের হতে না পারে—এজন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

সমাবেশে উপস্থিত তরুণরা বলেন, দেশের ৪৯% যুবসমাজ যদি তামাকের ক্ষতিকর ছোবল থেকে রক্ষা না পায়, তাহলে দেশের ভবিষ্যতও অনিবার্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খুচরা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা গেলে তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে। কারণ তামাক কোম্পানিগুলোর মূল লক্ষ্যই হলো তরুণ প্রজন্ম—তাদের একবার এই চক্রে ফেলে দিতে পারলেই নিকোটিনের আসক্তিতে তারা দীর্ঘমেয়াদে বন্দি হয়ে পড়ে।

সমাবেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের জোর দাবি জানায় তারা।

সমাবেশে তামাকবিরোধী সংগঠনদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রজ্ঞা, বিএনটিটিপি, বিসিসিপি, টিসিআরসি, ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট, নাটাব, এইড ফাউন্ডেশন, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, প্রত্যাশা, পিপিআরসি, মানস, তাবিনাজ, ডাস এবং বিটিসিএ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close