অপরাধকমলগঞ্জ উপজেলা
কমলগঞ্জে ছেলেকে শাসন করায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতন; থানায় অভিযোগ
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে সন্তানকে শাসন করাকে কেন্দ্র করে স্ত্রীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গত (২৮আগস্ট) বুধবার সকালে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের তেঁতইগাঁও এলাকায় অনিল সিংহ এর বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটে।
সড়জমিন ও থানায় করা অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার আদমপুর ইউনিয়ন এর তেঁতইগাঁও গ্রামে অনিল সিংহ ভানুবিল গ্রামের কৈনাহান দেবী বিবাহ করেন। তাদের সংসার চলাকালীন সময়ে পরিবারের কাউকে না বলে ও সমাজের নিয়ম নীতিকে তুয়াক্কা করে আরো ২টি বিবাহ করেন অনিল সিংহ। তাদের মধ্যে ৩য় স্ত্রী শিখা পালের ছেলে অসীম সিংহ (৭) কে রেখে স্ত্রীকে সংসার ছেড়ে পরিত্যাগ করে অন্য একটি যায়গায় বিয়ে করেন। বর্তমানে কৈনাহান দেবী ও ২য় স্ত্রী লক্ষীতম্বী দেবী সংসার করছিলেন। এদিকে ২য় স্ত্রী লক্ষীতম্বী দেবী ও অনিল সিংহ মিলে প্রথম স্ত্রী কৈনাহান দেবী বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করতে থাকে। কৈনাহান দেবী ও লক্ষীতম্বী তাদের ৩য় সতীন শিখা পালের ছেলেকে লালন পালন করছিলেন।
এদিকে, গত ২৮ আগষ্ট বুধবার বিকালে ৩য় স্ত্রী শিখা পালের ছেলে অসীম সিংহ (৭) বাড়ীর সামনে বালতি রাখা পানি বিনষ্ট করলে সৎ মা কৈনাহান দেবী শাসন করলে স্বামী অনিল সিংহ ও লক্ষীতম্বী মিলে কৈনাহান দেবীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করতে থাকে। এতে তার ডান হাতের কিছু অংশ কেটে যায়। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে কৈনাহান দেবীকে স্বামী অনিল সিংহ ও ২য় স্ত্রী লক্ষীতম্বী বাড়ীতে না আসার জন্য নিষেধ করেন। এ ঘটনার পর থেকে কৈনাহান দেবী ভানুবিল গ্রামে তার ভাই সুখ সিংহের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন।
স্থানীয়রা জানান, অনিল সিংহ খুব খারাপ প্রকৃতির লোক। প্রথম স্ত্রীর খাওয়া দাওয়া চলা ফেরা কোনো ভাবেই দেখতে পারেনা। তার সবকিছু আলাদা। একটা স্বামী তার স্ত্রীকে যতটুকু সম্মান করার কথা সেটা সে পালন করে না। এছাড়াও তারা জানান, সমাজের মানুষ অনিল সিংহকে একঘরে করে রাখছে তার কারণ সে সমাজের কোনো নিয়ম মানে না ও সমাজের বাহিরে হিন্দু বাঙ্গালী মহিলাকে বিয়ে করেছে। যা আমাদের ধর্মে মানায় না।
কৈনাহান দেবীর ছোট ভাই সুখ সিংহ জানান, বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে নানান ভাবে নির্যাতন করে আসছে অনিল সিংহ। তার বাড়ি থেকে মেরে বের করে দিয়েছে এ নিয়ে তিনবার। বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা কিছু বলতি পারিনি। যে স্বামীর ঘরে আছে সে স্বামী তার বরণ পূষন করে না। নিজে কাজ করে অনিল সিংহের সংসার চালায়। শুধু থাকাটাই স্বামীর ঘরে। তারপরও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার বোন কৈনাহান দেবীর গায়ে হাত তুলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার এ বিষয়ে সমাজের সবার কাছে বিচার প্রার্থী হয়েছি সাথে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
কৈনাহান দেবীর স্বামী অভিযুক্ত অনিল সিংহ জানান, আমার উপর যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। তারা সবাই মিলে আমাকে মেরেছে। আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটার দাগ আছে আপনারা দেখতে পারেন।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল আলম জানান, অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।