অপরাধজাতীয়

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ প্রশ্নের মুখে নীতি, উত্তপ্ত সংসদ

সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে আলোচিত প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়ার ইস্যুতে বিব্রত সরকার ও আওয়ামী লীগ। ভেতরে ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রকাশ ঘটেছে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে।

যদিও সাবেক আইজিপি বেনজীর- সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ- এমপি আজীম ইস্যুতে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একাধিক সভায় সরকারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করে ‘বেনজীর-আজিজ আওয়ামী লীগের লোক নন’ এবং তাদের বিচার চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও।

এর কয়েক দিন পর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতি বিভিন্ন মহলের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের কিছু বক্তব্য দুর্নীতিবাজদের পক্ষেই ‘সাফাই গাওয়া’ কিনা– এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।

যদিও গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনায় উত্তপ্ত হয়েছে জাতীয় সংসদের অধিবেশন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম একের পর এক সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি, বাড়ি, জমিসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য সামনে আসার প্রেক্ষাপটে রীতিমতো ক্ষোভ ঝাড়েন। রাজনীতিবিদদের পাশ কাটিয়ে আমলাদের ওপর সরকারের অতি নির্ভরতা এবং আইন করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দেওয়ার বিধান শিথিল করায় উষ্মা প্রকাশ করে তা সংশোধনের দাবিও তোলেন তারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই প্রকাশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক নেতা প্রশ্ন উঠছেন, টানা চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন একটি সরকার এবং তার এত সংস্থার অজ্ঞাতসারে এত বড় বড় দুর্নীতি-লুটপাটের ঘটনা কীভাবে চলতে পারে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্নে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য জনমনে আরও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বেশির ভাগ নেতা সরকারের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরে বক্তব্য দিলেও কেউ কেউ এমন সব বক্তব্য দিচ্ছেন, যেটা দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিয়ে ‘সাফাই গাওয়া’র শামিল হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভ এবং সরকারের ভাবমূর্তি ফেরাতে এখনই বিষয়টি কঠোর হাতে দমনের পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close