অপরাধঢাকানারায়ণগঞ্জ

মাসুমের নেতৃত্বে গাড়ি ভাঙচুর, ভিডিও পাঠানো হতো নেতাদের: র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আবু তালেব মাসুম (৩৭)। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি তিনি। অবরোধ শুরু পর থেকে বিভিন্ন স্থানে একাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায় মাসুম। তার নেতৃত্বে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের পর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ ও বটিমে ভিডিও পাঠাতেন মাসুম। এমনকি গণমাধ্যমেও ভিডিও পাঠিয়েছেন। যাতে করে তাদের প্রচার-প্রচারণা হয়।

গত ২৯ অক্টোবর অবরোধের শুরুর দিন চারটি গাড়ি ভাংচুর করে মাসুম।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকাসহ বিভিন্ন মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী কর্তৃক গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহণসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, হামলা ভাংচুরসহ বিভিন্ন ধরণের নাশকতা ও সহিংসতা চালায়। দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী কর্তৃক এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। র‌্যাব এ নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায়, গতকাল শুক্রবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে উপস্থিত থেকে নাশকতায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্তকৃত নাশকতার অন্যতম মূলহোতা এবং প্রায় ১৫টি মামলার পলাতক আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আবু তালেব মাসুম (৩৭) এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি নারায়ণগঞ্জ জেলা জিয়া মঞ্চের সভাপতি জজ মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতাররা তাদের দলীয় শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনায় মাসুমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় সহিংসতা ও নাশকতা চালায়। গ্রেফতার মাসুম গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় আসে। পরবর্তীতে গ্রেফতাররা রাজধানীর পল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চালায়।

এসময় তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও হামলা চালায়। পরবর্তীতে গ্রেফতাররা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফিরে আসে। গ্রেফতার ছাত্রদল নেতা মাসুম শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাস্তা অবরোধ করে নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতার মাসুমের পরিকল্পনা মোতাবেক তার অনুসারীরা লাঠিসোটা হাতে মিছিল করে সোডাউন দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতংক ও ত্রাসের সৃষ্টি করে রাস্তা অবরোধ করে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে নাশকতা ও সহিংসতার তান্ডব লীলা চালায়।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, তারা যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে তাদের সমমনা অন্যান্য অনুসারীদের নাশকতা সৃষ্টিতে প্ররোচিত করতো। তাদের দলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নিকট প্রেরণ করতো বলে জানা যায়।

গ্রেফতাররা মূলত এসকল নাশকতা ও সহিংসতার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ দেশে অরাজকতা পরিবশে তৈরি করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছিল।

গ্রেফতার মাসুমের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দায়েরকৃত ৪টি নাশকতার মামলায় সে পলাতক ছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আগেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় ১০টির অধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার মাসুম ও অনুসারীদের এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, খিলক্ষেত, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সর্বশেষ কক্সবাজারে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় সেখানে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতার জজ মিয়া ছাত্রদল নেতা মাসুমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে মাসুমের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে রাস্তা অবরোধ করে নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারায়নগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৪টির বেশি মামলা রয়েছে।
এছাড়াও সে মাসুমের নির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে মাসুমের সঙ্গে কক্সবাজারে আত্মগোপনে চলে যায় এবং আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করে।

ডিআই/এসকে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close