কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত

এমদাদুল্লাহ্, বজ্রধ্বনি:
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০ টায় জামাত শুরু হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এবারের ঈদ জামাতে ইমামতি করেন সাবেক ইমাম মাওলানা আবুল খায়ের মোহাম্মাদ নুরুল্লাহর (রহ.) ছেলে ও মোতাওয়াল্লি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত আগের ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মাদ সাইফু্ল্লাহ।
শোলাকিয়া ঈদগাহের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু করা হয়। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী শটগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর ঘোষণা দেন।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় আসেন ঈদ জামাতে অংশগ্রহণের জন্য। দূরের মুসল্লিরা ঈদের ২/১দিন আগেই এসে কিশোরগঞ্জে অবস্থান নেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য শহরের তিনটি স্থানে থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন ঈদগাহ হিসেবে পরিচিত শোলাকিয়ায় এবারের ১৯৮ তম ঈদুল ফিতরের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বোল আবহাওয়া থাকায় ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহে। ভোরের আলো ফুটার আগেই মুসল্লিরা দলে দলে শোলাকিয়া ময়দানে আসতে থাকেন। সকাল ৯ টার মধ্যেই শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠের ভিতরে জায়গা না পেয়ে অসংখ্য মুসল্লি পাশের সড়ক, সেতু, বহুতল ভবনের ছাদসহ অলি গলিতে নামাজ আদায় করেন। মাঠের পশ্চিম পাশের সড়কে ইমামের আগে দাড়িয়ে কয়েক হাজার মুসল্লিকে ঈদের নামায আদায় করতে দেখা গেছে (যদিও শরিয়তের মাসয়ালা অনুযায়ী ইমামের আগে দাড়িয়ে মুকতাদি নামায় আদায় করলে নামায হবে না)।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এবারের ১৯৮ তম জামাতে ছয় লাখের মতো মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি এবং দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকার ও প্রশাসনের সমৃদ্ধি কামনা করে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নিকট দোয়া করা হয়।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন। নির্বিঘ্নে ঈদ জামাত সম্পন্ন করতে শোলাকিয়া ঈদগাহে কয়েকস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ড্রোন ক্যামেরা, বাইনোকুলারসহ বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়াও ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হয়। সেনাবাহিনীও বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। এ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ছিল। বিএনসিসি ও স্কাউটস সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ এবং ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ আদায় করেছেন ঈদগাহের মোতাওয়াল্লি দেওয়ান ফাত্তাহ দাদ খান মঈন। তিনি বলেন, বিগতদিনে অন্যায়ভাবে মোতাওয়াল্লির ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বিতর্কিত ইমামকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এবার মোতাওয়াল্লির মনোনীত ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মাদ সাইফুল্লাহকে পুনর্বহাল করায় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মাদ সাইফুল্লাহ বলেন, বিগত ১৫ বছরে যা হয়েছে তা সামনে আনতে চাই না। এখন সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। দেশ ও জাতির কল্যাণে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ্ সোহেল, জামাতে ইসলামীর জেলা আমীর অধ্যাপক রমজান আলী, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল্লাহ্, বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক মো. ইকরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।