
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাতটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত হয়েছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
মঙ্গলবার (১০ মে) রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ূম প্রমূখ।
বিগত দিনগুলোতে ৭ টি রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে একত্রে অংশগ্রহন করতে দেখা গেছে । তাছাড়া গণসংহতি আন্দোলন নামক রাজনৈতিক দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি গত বছর তাদের দলের ৪র্থ জাতীয় সম্মেলনে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের সংস্কারের লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দেন। পরবর্তীতে জোনায়েদ সাকির প্রচেষ্টায় বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনা চলতে থাকে,যার ফলে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরী করেছে “গণতন্ত্র মঞ্চ”।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত দলের নেতারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা মনে করেন ক্ষমতাসীনদের অধীনে কোনও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দলগুলোর নেতারা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমরা কতগুলো বিষয় চিহ্নিত করে একমত হয়েছি। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, তাদের রিজাইন করতে হবে। তারপর একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে।’
‘এখন কীভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে, কতদিন মেয়াদ হবে এসব বিষয়ে আমরা সাংবিধানিক দিকগুলোও খতিয়ে দেখছি। পরের বৈঠকগুলোতে এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে’ মন্তব্য করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
সাত দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস পাওয়া গেছে, দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক মঞ্চের নাম হচ্ছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। সূত্রের দাবি, এই নামে সবাই একমত হয়েছেন। ২৩ মে পরবর্তী বৈঠকে নাম ও এর প্রকাশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নির্বাচন ও শাসনতন্ত্র প্রশ্নে ন্যূনতম কর্মসূচি বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আগামী বৈঠকে এই কর্মসূচি নিয়ে আবারও আলোচনা হবে। মঞ্চের নাম ও কাঠামো এবং অন্যদের সংযুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। পরবর্তী বৈঠকে রাজপথের কর্মসূচি বিষয়ে আলোচনা হবে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘অবিলম্বে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে সাত দল একমত হয়েছে। এই ঐক্যকে আরও বৃহত্তর ঐক্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করবো। যারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে, তারা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে মানুষের কাছে চিহ্নিত হবে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আপাতত সাত দলের সমন্বয়ে রাজনৈতিক মঞ্চটি হলেও ভবিষ্যতে এর পরিসর বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সাত দলের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর জোটের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে মত দিয়েছেন নেতারা। এছাড়া, বৈঠকের আলোচনা, দাবি ও সিদ্ধান্তগুলো সমন্বয় করার জন্য প্রত্যেক দলের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ড্রাফটিং কমিটি গঠনেরও বিষয়ে একমত হয়েছেন নেতারা।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা ভোটাধিকার ফেরানোর লড়াইয়ে সর্বব্যাপকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করবো। এটা কেবল সাত-ই না, আরও বড় হবে। আর মঞ্চ কীভাবে রাজনৈতিকভাবে সামনে আসবে, কী কর্মসূচি দেবে, এসব কিছু আগামী বৈঠকে ঠিক হবে।’
সূত্রের দাবি, সরকারবিরোধী আন্দোলনে এই রাজনৈতিক মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ না হলেও যুগপৎভাবে দাবি আদায়ে রাজপথে কর্মসূচি দেবে।
জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের সাত দলের কিছু জায়গায় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এর বাইরেও কোনও দল বা ব্যক্তি যদি এই মঞ্চে আগ্রহী হন, তারা যদি মনে করেন এই মঞ্চের সঙ্গে চলা যায়, এমন দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে নেতারা মত দিয়েছেন। আমরা এখন নাম চূড়ান্ত করে, আট-দশটি দাবি নির্ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ’
নুরুল হক বলেন, ‘আমরা অপ্রস্তুভাবে শুরু করতে চাই না। নিজেদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া সৃষ্টি করে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করতে চাই। আমাদের যে দাবিগুলো ঠিক হবে, সেই দাবিতে যারাই একমত হবেন, তাদেরকে মঞ্চে নিতে কোনও বাধা থাকবে না।’
মঞ্চের নেতারা জানিয়েছেন, সাত দলের সমন্বিত দাবিগুলোর প্রতি কোনও দল একমত প্রকাশ করে যোগ দিতে চাইলেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের বিষয়ে তারা অঘোষিতভাবে একমত, এতে ধর্মভিত্তিক কোনও সংগঠনকে যুক্ত করবেন না। সেক্ষেত্রে জামায়াত বা এ ধরনের কোনও সংগঠনকে মঞ্চে দেখা যাচ্ছে না, বলেই জানায় সূত্র।
এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘এটা আদর্শিক কোনও জোট নয়। দেশজাতির প্রয়োজনে এই মঞ্চ। তবে আমরা আক্রমণাত্মক নয়, সহনশীলভাবে এগিয়ে যেতে চাই।’