নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

১৮ নভেম্বর, নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা বলেন,

আপনারা জানেন, বিগত ১৫ বছর ধরে একটি দল সকল গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখল নিয়েছিলো। কিন্তু জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত ৫ আগষ্ট বিগত সরকার প্রধান দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। বিগত সরকারটি ছিল সিন্ডিকেটের সরকার, সন্ত্রাস-দুর্নীতিসহ চাঁদাবাজির সরকার। তারা পরিবহন খাতে বিআরটিএ এর সাথে যোগসাজশ করে চাঁদাবাজিসহ সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেবার জন্য ডিজেলে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছিল ২. ৩২ পয়সা। ৫ আগষ্টের পরে ৮ আগষ্ট নতুন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দাড়িয়ে সরকার গঠন করেছে, তাই এই সরকার সিন্ডিকেট-চাদাঁবাজসহ দুর্নীতির সরকার নয়।

এই বাস্তবতায় যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সাথে বেশ কয়েক বার নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রুটে বাস ভাড়া কমানোর জন্য বসেছিল। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বাস ভাড়া কমানোর দায়িত্বশীল আচরণ না পেয়ে গত ২৬ অক্টোবর যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম ৩ টি দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হচ্ছে : ১) ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (লিংক রুটে) বাস ভাড়া ৪৫ টাকা করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে পাগলা-পোস্তগোলা হয়ে ঢাকা, চিটাগাং রোড, সোনারগাঁ পঞ্চমীঘাট, পানাম, কোবগা (তাজমহল) রুটের সকল বাস সিএনজি চালিত হলেও ডিজেলের দামে ভাড়া আদায় করছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নিয়ে বাস ভাড়া কমিয়ে আনতে হবে। ২) ছাত্রদের জন্য দ্রুত অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করতে হবে। ৩) ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বিআরটিসি এসি ৬০ টাকা এবং বেসরকারি এসি বাস ৬৫ টাকা করতে হবে। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বাস ভাড়া কমানোর সময় বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করে, ১৭ নভেম্বরের মধ্যে বাস ভাড়া না কমালে নারায়ণগঞ্জ শহরে অর্ধদিবস হরতাল করবে ।

আমরা ছাত্ররা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর এই দাবিকে যৌক্তিক মনে করে সমর্থন জানাই এবং বাস ভাড়া কমানোর জন্য নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করি। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর ২১ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির মুখে ১৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক বিকাল ৪ টায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ৫০ টাকা বাস ভাড়া, ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া, এসি বাস ভাড়া ৭০ টাকা এবং নারায়ণগঞ্জের অন্যন্য রুটে সিএনজি চালিত বাসে যৌক্তিক ভাবে বাস ভাড়া কমানো হবে। এবং যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। জেলা প্রশাসকের আহ্বানকে সাধুবাদ জানিয়ে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল প্রত্যাহার করেন।

আমরা শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক এবং যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এবং উভয়ের দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে শিক্ষার্থীদের নিশ্চিত করি, সোমবার থেকে ছাত্রদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আজ সোমবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের কোন বাসেই ছাত্রদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নয়, পুরো ভাড়া রাখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সকালে ঢাকায় যাবার জন্য বাস কাউন্টারে গেলে অর্ধেক ভাড়া রাখার ব্যাপারে তর্কাতর্কি এবং বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এবং কোন বাস অর্ধেক ভাড়া রাখছে না।

এই পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্য ব্যাপক ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দেখতে পেয়েছি। এবং আমরা আশঙ্কা করি, যেকোন সময় বাস কাউন্টার কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নিতে পারে। এবং এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য কোনভাবেই শিক্ষার্থীরা দায়ী থাকবে না। তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব বর্তাবে জেলা প্রশাসক এবং বাস মালিকদের উপর। আমরা শিক্ষার্থীরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে চাই। সুতরাং এই সংবাদ সম্মেলনে আমরা পরিস্কারভাবে ঘোষণা করছি, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে জেলা প্রশাসকের ঘোষণা অনুসারে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলি, শিক্ষার্থীরা সরকার পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে, অর্ধেক ভাড়া আদায় করতেও সক্ষম হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন

১। ফারহানা মানিক মুনা – সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, নারায়ণগঞ্জ জেলা।

২। আজিজুল ইসলাম রাজিব – সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর।

৩। সাইফুল ইসলাম – আহবায়ক, সমাজতাত্ত্বিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারায়ণগঞ্জ জেলা।

৪। ইফাদ ইমতয়াজ অয়ন্ত – সহ-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, নারায়ণগঞ্জ জেলা।

৫। রাইসা ইসলাম – সংগঠক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা।

৬। মো. জাহিদ হাসান – সংগঠক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা।

৭। নাজমুল ইসলাম – প্রতিনিধি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা।

৮। মৌমিতা নূর – সংগঠক, তারুণ্যের ‘২৪, নারায়ণগঞ্জ কলেজ।

৯। মাসুম বিল্লাহ ফারাবি – সংগঠক, শহীদ মানিক-রহমান-পান্থ-নাঈম স্মৃতি সংসদ। এছাড়াও ছাত্র সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close