
রাফি তালুকদার : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শ্বশুর বাড়িতে এক যুবককে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৬ জানুয়ারি সোমবার রাতে নিহতের বাবা হারুন মিয়া ৬ জনকে আসামি করে ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহত যুবক অভিযোগকারীর ছেলে ইমন মিয়া (২৭)।
অভিযুক্তরা হলো নিহত ইমনের শ্বাশুরি প্রধান আসামি হাফসা বেগম। তিনি মরম সরকারের বাড়ির মৃত নাসির মিয়ার স্ত্রী। অন্যান্য আসামিরা হলো নিহত ইমনের স্ত্রী আরজুদা আক্তার বীথিকা, শ্যালক তন্ময়, প্রতিবেশী দয়াল মিয়ার ছেলে সাজন, রাজন ও বিজন। এদিকে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাবী স্ত্রী তার সাথে না ফেরায় সে নিজেই নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ইমনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন মারধর করে। পরে ৩ জানুয়ারি স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে গেলে আসামিরা ইমনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি দেখে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করেন। সেখানে একদিন চিকিৎসাধীন থেকে ৪ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন রাতেই পারিবারিকভাবে তাকে ভৈরবে দাফন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, সিকদার বাড়ির ইমনের সাথে মরম সরকারের বাড়ির আরজুদা আক্তার বীথিকার সাড়ে ৪ বছর আগে বিয়ে হয়। এই দম্পত্তির আড়াই বছরের নূরতাজ নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্যজীবনে কলহ লেগেই থাকতো। ইমন এলাকার একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্ত ছিলো। স্বামী ইমনের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী আরজুদা আক্তার বীথিকা তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। গত ৩১ ডিসেম্বর নোটারী পাবলিক আদালত কিশোরগঞ্জ এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আরজুদার আক্তার বীথিকার এটি দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো। এ ঘটনার পর ৩ জানুয়ারি ইমনের মা পুত্রবধূ আরজুদা আক্তার বীথিকাকে আনতে গেলে সে ফিরে আসেনি। সন্ধ্যা ৮টায় ইমন স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে আগুনে দ্বগ্ধ হয়।
নিহতের বাবা হারুন মিয়া বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। এর আগেও একটি মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ছেলের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এ বিষয়ে স্ত্রী আরজুদা আক্তার বীথিকা বলেন, ইমন শুক্রবার সন্ধ্যা ৮টার দিকে আমার বাড়িতে আসে। আমি তাকে বলি তোমার সাথে আমার তালাক হয়ে গেছে। এখন থেকে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এ সময় ইমন পকেট থেকে পেট্রোলের বোতল শরীরে ঢেলে দিয়ে আমাকে হুমকি দেয়। পরক্ষণেই শরীরে নিজেই আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পার্শ্ববর্তী লোকজন ও আমি তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করি। এ সময় আমার শরীরেও আগুনে দ্বগ্ধ হয়। আত্মহত্যার চেষ্টা ছিলো এজন্য তার পরিবারকে খবর দিলে তারা এসে ইমনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ইমন এর আগেও ফাঁসিতে ঝুঁলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকায় লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।