জাতীয়মতামতরাজনীতি

বিএনপি-জামায়াতের একটাকেও ছাড়ব নাঃ শেখ হাসিনা

বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যে ফের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বলেছি, আপনারা আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিছিল করেন মিটিং করেন; কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোনো মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়, কিংবা বোমা মারা বা গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা ঘটে তাহলে একটাকেও ছাড়ব না। আমরা সহ্য করেছি দেখে যেন মনে না করে, এটা আমাদের দুর্বলতা।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে এদেশের মা-বোনের ওপর। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যে তারা অত্যাচার করেনি। পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী যেভাবে নির্যাতন করেছিল, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ঠিক একইভাবে অত্যাচার করেছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কই আমরা তো কিচ্ছু করছি না? তাদের মেয়েরা মিছিল করছে, আন্দোলন করছে, স্লোগান দিচ্ছে। তারা ইচ্ছে মতো করতে পারছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা অত্যাচার করেছিল সেটা আমরা ভুলব কিভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কি করে? তার পর তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। এটা কোনো মানুষের কাজ? জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা। এটাই হচ্ছে নাকি বিএনপির আন্দোলন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। অস্ত্র চোরাকারবারী, গ্রেনেড হামলাকারী হিসেবে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। তাদের নেতারা হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং তা প্রমাণিত। তারেকের বিরুদ্ধে তো আমেরিকার এফবিআই এসে স্বাক্ষী দিয়ে গেছে। এটা আমরা করেছি তা না; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের মামলা। কাজেই এরা এই দেশের মানুষের কল্যাণে কি কাজ করবে? কিন্তু আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে নারীদের সবধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি তথা নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে বলেও অবহিত করেন। সমাজের অর্ধেক নারী; তারা অচল থাকলে সমাজ এগোতে পারবে না বলেও মনে করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম, যেখানে নারীদের সম-অধিকার দিয়েছে। সম্পদে স্বামীর বাড়ি ও বাবার বাড়ি, দুই দিকেই সম্পদের অধিকার দিয়েছে ইসলাম ধর্ম। সেখানে নারীদের ঘরে আটকা নয়, কাজের সমস্ত সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কথা। কাজেই আজ শিক্ষা-দীক্ষায় নারীরা সেই সুযোগ পাচ্ছে। অথচ ধর্মের নামে নারীদের যারা পর্দার আড়ালে রেখে দিতে চায় তাদের বলব, মহানবী (সা.) যখন ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করেন তখন কোনো পুরুষ নয়, একজন নারী এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি হচ্ছেন বিবি খাদেজা।’

ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ নিয়ে আসতে না পারে। যদি কারও দ্বন্দ্ব হয়। আর কেউ যদি ওইরকম আরেকটা বিয়ে করতে যায়, তাহলে সেই স্বামীর বাড়ির জমিতে কোনো অধিকার থাকবে না। তখন ওই নারীর (আগের স্ত্রী) একার অধিকার হবে। সেটা আমি নিশ্চিত করে দিয়েছি।’

এর আগে, বিকেলে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়ে সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তার আগে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়ান। মঞ্চে আসার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরে সম্মেলনের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি সাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হলেও করোনো মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয়নি। এখন এই সম্মেলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্বে এলেন তাদের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close