অপরাধনারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ শহরে গাড়ি আটকের নামে ট্রাফিকের বর্বর নির্যাতন, রমরমা চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্র‌তি‌নি‌ধি: শহর ও শহরতলীতে নির্বিগ্নে ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক ও মিশুকের সয়লাভ হলেও ট্রাফিক পুলিশ যেন দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছে। কতিপয় সাংবাদিকের ষ্টিকার ছাড়াও ট্রাফিক পুলিশের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাও যে পিছিয়ে এ অবৈধ যানবাহন চলাচলে সহযোগিতার জন্য। চাষাড়ায় সাবেক পুলিশ ফাড়িটি এখন ট্রাফিক পুলিশে ডাম্পিং তৈরী করা হয়ে অবৈধভাবে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে আটকের পর সেখানে রাখার জন্য। ফাড়ি থেকে মাত্র ১৫ মিটার দুরে অবস্থিত মহিলা কলেজটি। চাষাড়া টু পঞ্চবটী সড়কে চলাচলকারী কয়েকশত ইজিবাইক পুলিশের নাকের ডগাড় সামনে দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করছে। সেই সকল ইজিবাইকগুলোকে ট্রাফিক পুলিশে দ্বায়িত্বে নিয়োজিত কোন সদস্য আটক করেনা। কারন দুপুর ১২ টা এবং দুপুর ২টায় প্রতিটি ইজিবাইক থেকে ২০ টাকা করে চাদাঁ নিচ্ছে সেখানে দ্বায়িত্বরত কনষ্টেবলগন। অথচ চাষাড়া শহীদ মিনার,বালুর মাঠ,গলাচিপার মোড়,২ নং রেলগেইট এলাকায় গলির ভেতরে চলাচলরত মিশুক ও ইজিবাইকগুলো ধরে নিয়ে আসা হয় একঝাঁক পুলিশের দালালের মাধ্যমে। শুধু শহরই নয় পঞ্চবটী-ফতুল্লার প্রধান সড়ক থেকেও টাকা লাভের আশায় হাসান-সহিদুল-সফিকগং। অনেক সময় চালকদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গাড়ি টেনে নিতে গেলে গাড়ির চালকদেরকে বেদম প্রহারও করেন উক্ত ট্রাফিক কর্তারা। এর আগে পঞ্চবটী যমুনা গেটের সামনে থেকে জোড়পুর্বক গাড়ি ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক চালককে ব্যাপক মারধর করেন এটিএসআই হাসান। তা দেখে দুর থেকে মুঠোফোনে ভিডিও করে এক প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান। পরবর্তীতে উক্ত দারোয়ানকে মারধর করে মুখ ও নাক দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে জরিমানা দিয়ে মুক্তি পান এটিএসআই হাসান।

ঠিক তেমনী ভাবে নগরীর ২নং রেলগেইট রহমতুল্লাহ ম‌ি‌র্কেটের সাম‌নেথেকে একটি ব্যাটা‌রি চা‌লিত রিক্সা ধর‌তে ‌গি‌য়ে রিক্সাচালক‌কে মারধর ক‌রে। এছাড়াও রা‌তে চাষাড়ায় মিশুক ধরতে গিয়ে আরেকটি সমালোচনার জন্ম দেন কনষ্টেবল সহিদুল। সেখানে ভিডিওতে দেখা যায় গাড়ি আটক করতে গিয়ে প্রথমে চালকের গালে চড়-থাপ্পর এবং পরবর্তীতে তার মাথার চুল ধরে ব্যাপক ঝাকুনি দেন উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা। এভাবেই প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন অলিগলি ইজিবাইক ও মিশুক আটক করতে গিয়ে চালকদের গায়ে হাততোলাসহ ব্যাপকভাবে শারীরিক নির্যাতন করেন ট্রাফিক পুলিশে দ্বায়িত্বরত কর্তারা।
আবার শহরের প্রতিটি প্রধান সড়কের উপর ফুটপাত ও প্রতিটি বিপনী সেন্টারের সামনে বড়লোকদের গাড়িগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা পার্কিং করে রাখছেন এবং চাষাড়া মহিলা কলেজ সংলগ্ন সিএনজি ষ্ট্যান্ড,রাইফেলস ক্লাব সংলগ্ন সিএনজি ষ্ট্যান্ড,আমার ভবন সংলগ্ন লেগুনা,খাজা সুপার মার্কেটের সামনে লেগুনা,সোনালী ব্যাংকের সামনে মুক্তারপুরগামী সিএনজি ষ্ট্যান্ড, চাষাড়া পেট্রোল পাম্পের সামনে টেক্সি ষ্ট্যান্ড,২ নং রেলগেইট সিএনজি ষ্ট্যান্ড,২নং রেলগেইট পুলিশ বক্সের উল্টো পাশে উৎসব ও বন্ধন গাড়ির কাউন্টার বসিয়ে সাধারন মানুষের যাতায়াতের প্রতিনিয়ত ব্যাঘাত করলেও তা যেন চোখেই পড়েনা শহরে দ্বায়িত্বে থাকা উক্ত ট্রাফিক পুলিশের। কারন উক্ত অবৈধ ষ্ট্যান্ড গুলো থেকে তারা প্রতিদিনই চাদাঁ আদায় করছেন।
এক অনুসন্ধানে দেখা যায়,শহর ও শহরতলীতে চলাচালকারী ইজিবাইক ও মিশুকের সংখ্যা প্রায় ৬ শতাধিক। যার একভাগ কথিত সাংবাদিকের ষ্টিকারে আর বাকীগুলো ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত কর্তাদের। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন এটিএসআই হাসানের নাম। নগরীতে চলাচলকারী মালবাহী ভ্যানগাড়ীগুলো ( মটরযুক্ত) পুরোটাই হাসানের নিয়ন্ত্রনে। যার প্রতিটি গাড়ির জন্য মাসে ২ হাজার টাকা হারে আদায় করছেন। তারপরে রয়েছেন এটিএসআই সফিক,কনষ্টেবল সহিদুল ইসলাম। সাইনবোর্ড থেকে চাষাড়া রোডে চলাচলকারী বেশীরভাগ ইজিবাইকগুলো রয়েছে টিএসআই আবদুর রহমানের নিয়ন্ত্রনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান,ট্রাফিক পুলিশরা নিজেরাই যেহেতু ইজিবাইক ও মিশুকগুলো মাসোহারার বিনিময়ে রাস্তায় চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে সেখানে কথিত নামধারী সাংবাদিকরাতো ষ্টিকারযুক্ত গাড়ি সড়কে চালাবেন টাকার বিনিময়ে। জানা গেছে,প্রতিটি গাড়ির জন্য মাসে দেড় হাজার টাকা নেয় কথিত সাংবাদিকরা। মাস থেকে ৫০০ টাকা হারে ট্রাফিকের সদস্যদের হাতে তুলে দেন উক্ত কথিত সাংবাদিকরা।
রুটে চলাচলরত গাড়ির চালকরা জানান,আমাদেরকে প্রতিনিয়ত আটক করছেন ট্রাফিক পুলিশ। বিনিময়ে এক হাজার টাকা দিলেও কোন প্রকার রশিদ দেয়া হয়না। মাসে ৪/৫বার আটক করার পর মাত্র একবার একটি রশিদ দেয়া হয়। আবদুল আজিজ নামে এক মিশুক চালক বলেন, শহরে প্রবেশ করে খেপ মারলে একটা-দুইটা টাকা বেশী পাই। কিন্তু হেরা ( ট্রাফিক পুলিশ ) মাঝে মাঝে এলাকার ভেতরে গিয়াও আমাগো ধইরা লইয়াহে। মাঝে-মধ্যে হেরা আমাগো লাঠি দিয়া অনেক মাইর ধইর করে। কিছ’ কাইতে পারিনা কারন হেরা পুলিশ। আমরা দিন শেষে কা কামাই করি হেইডা দিয়া কোনমতে পোলাপাইন নিয়ে চলি। আবদুল আজিজের মত এমন শত শত চালকের এমনই উক্তি। তাদের দাবী আমরাও তো রক্তে মাংসেগড়া মানুষ। একজন মানুষ তার গায়ে পুলিশের পোষাকটি গায়ে লাগিয়ে কিভাবে এতটা অমানুষের কাতারে গিয়ে পৌছায় যা খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে আমাদের মাথায় ধরেনা। আমাদের গাড়িগুলোকে আটক গড়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে। আবার টাকাও আদায় করছে রশিদবিহীন। আমরা ট্রাফিক পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবো আমাদের উপর আপনাদের পুলিশগুলো যেহারে নির্যাতন করছে তা থেকে মুক্তি পাবো কবে নাগাদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close