নারায়ণগঞ্জরাজনীতি

শ্রমিকদের জন্য রেশন, জাতীয় মজুরি ২০ হাজার টাকা দাবি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের

শ্রমিকদের জন্য আর্মি রেটে রেশন প্রদানের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা। একই সাথে আইন করে ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন।

সারাদেশে দাবি দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসাবে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিকাল ৫ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্টের জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সহসভাপতি হাসনাত কবীর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, রূপগঞ্জ উপজেলার সভাপতি মোঃ সোহেল, রিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ জেলার সংগঠক খোরশেদ আলম, শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা আনোয়ার খান, মোফাজ্জল হোসেন।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উচ্চমূল্যে শ্রমিকের জীবন বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে শ্রমিকের খাদ্য তালিকা থেকে অনেক খাদ্য বাদ দিয়েছে। সরকার জিনিসপত্রের দাম কমাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এ অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত। দেশের শ্রমজীবীদের পরিশ্রমে উৎপাদন হয়। অথচ দেশে শ্রমজীবীদের কোন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই। আইন করে দেশের সমস্ত শ্রমজীবীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি করতে হবে। বর্তমান বাজার দর বিবেচনায় জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজারের কম হতে পারে না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি রেশন প্রদানের। সরকার টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে কয়েকটি খাদ্য পণ্য দিচ্ছে। এটা বাজার দামের থেকে সামান্য কম। এটাও শ্রমিকদের জন্য কেনা কঠিন। তার উপর আছে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির খাদ্য পণ্য সংগ্রহ করা। কর্মজীবীদের জন্য কাজ ফেলে এতো সময় দেয়া সম্ভব হয় না। বর্তমান সংকট মোকাবিলা করে উৎপাদনকে চালিয়ে নিতে শ্রমিকদের আর্মি রেটে রেশন দিতে হবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রম বিধিমালা সংশোধিত হয়েছে। শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী বিধিসমুহ বাতিলের জন্য দেশের জাতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ৫৬ টি সুপারিশ করা হয়েছিল। কয়েকটি সুপারিশ গ্রহণ করা হলেও উৎসব বোনাসের নিম্নতম সীমা নির্ধারণসহ প্রধান ৪০ টি সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। আইনের বিধানকে উপেক্ষা করে মাতৃত্বকালীন সুবিধা সংকুচিত করার সুযোগ রেখে মাতৃত্বকালীন সুবিধার নতুন হিসাব পদ্ধতি যুক্ত করা হয়েছে। মহিলা শ্রমিকদের প্রতি অসদাচরণের তদন্তে কমিটি গঠনের বিধানে হাইকোর্টের রায়কে লংঘন করা হয়েছে। নিরাপত্তা তহবিলে টাকা জমা রাখার হার কমিয়ে কারখানা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধে শ্রমিকদের চাকরি অবসানে প্রাপ্য আইনানুগ পাওনা পাওয়ার ক্ষেত্রকে অনিশ্চিত করা হয়েছে। রাত্রের সিফটের শ্রমিকদের চিকিৎসা সুবিধা, বিশ্রাম কক্ষ, ঠান্ডা পানি, ছুটির বিপরীতে অর্থনৈতিক সুবিধা, কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে শ্রমিকের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে।

অসদাচরণের অভিযোগ নিষ্পত্তির যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তা শ্রম আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসুত্রিতার বিদ্যমান অবস্থা শ্রম আইনের সাথে সাংঘর্ষিক বিধিমালা শ্রমিকদের দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে দেবে। রীতি অনুসারে শ্রমিকদের প্রাপ্যতাকে কমানো যায় না অথচ শ্রম আইন বা বিধিমালা যতবার সংশোধন করা হয়েছে প্রতিবারই শ্রমিকের সুরক্ষার পরিবর্তে কৌশলে শ্রমিকের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালায় শ্রমিকদের সুরক্ষার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরসমুহের ক্ষমতায়ন এবং ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারকে অবাধ করার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা প্রতিফলিত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ আইন এবং বিধিমালার শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী ধারাসমুহ বাতিল করে গনতান্ত্রিক শ্রম আইন এবং গনতান্ত্রিক শ্রম বিধিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close