
নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক ও তার বাহিনীর হামলায় ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত শিশু-নারীসহ ১১ জন আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। হামলায় ইউনিয়নের ১নং ওর্য়াডের আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোতালেব ভূঁইয়াসহ স্থানীয়দের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় রফিক ও তার ভাই মিজানুর রহমানের নেতৃত্ব ৪০ থেকে ৫০ জন সন্ত্রাসী এ হামলা করে। স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি বহিরাগত সন্ত্রাসীরাও প্রকাশ্যে গুলি চালায়।
স্থানীয়রা বলছেন, জমি দখলে দীর্ঘদিন যাবত চেষ্ঠা করছে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার তার ভাই মিজানুর রহমান। স্থানীয়রা জমি বিক্রি করতে না চাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় ৪০ থেকে ৫০ জন নিয়ে এলাকা দখলের চেষ্ঠা করে রফিক ও তার ভাই। স্থানীয়রা বাধা দিলে ইট-পাটকেল দিয়ে তাদের উপর হামলা করে। শর্টগান উচিয়ে চালানো হয় গুলি।
সূত্র জানায়, প্রায় ২ ঘন্টার হামলায় ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ১১ জন আহত হয়। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- তাজেল (পিতা মোক্তার), আলামিন (পিতা রমজান আলী) ও আবুল পাশার দুই ছেলে আলাদি ও জাগু মিয়া ওরফে জাকির। তাৎক্ষণিক আহত সবার নাম জানা সম্ভব হয়নি।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কথা হয় গুরুত্বর আহত ও গুলিবিদ্ধ তাজেলের সাথে। তিনি বলেন, রফিক আমাদের জমি দখল করতে চায়। কিন্তু আমরা জমি বিক্রি করতে চাই না। তাই রফিক ও তার ভাই মিজান বাহিনী নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। তাজেল বলেন, আমাদের উপর যখন ওরা হামলা করেছিল, তখনও ওদের সাথে পুলিশ ছিল। পুলিশের সামনেই ওরা আমাদের উপর গুলি চালায়।
নছিয়া খাতুন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, জমি দখল করতে রফিকের নির্দেশে তার বাহিনীর সদস্যরা আমাদের উপর হামলা করে। পুলিশ প্রশাসনের সামনেই আমার ছেলে ও ভাইয়ের ছেলের উপর গুলি চালায়। আমি এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।
নাওড়ার আবুল পাশার ছেলে জাগু মিয়াও গুলিতে আহত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, আমার ছোট ভাই আলাদিনকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনা জেনে ইছাপুরা থেকে আমি বাড়িতে আসি। তখন আমার উপরেও হামলা করা হয়। আমিও ছররা গুলিবিদ্ধ হই। তিনি বলেন, পিস্তল, শর্টগান, রামদা, রডসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রফিক ও মিজানের নির্দেশে আমাদের উপর হামলা করা হয়। জমি লিখে না দেওয়ায় আমাদের জমি দখল করতে এসে বাড়ি-ঘরে লুটপাট করে। বাধা দেওয়ায় গুলি চালায়।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওর্য়াডের আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোতালেব ভূঁইয়া বলেন, রফিক ও তার ভাই মিজানের নেতৃত্বে জসু, রুবেল, রহমান, মোজাম্মেলসহ ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী স্থানীয়দের বাড়ি ঘরে হামলা ও লুটপাট করে। তাদের বাঁধা দিতে গিয়ে নাওড়ার প্রায় ১১ জন আহত হয়েছে। আহদের মধ্যে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধদের রূপগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতায় দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রফিক ও তার বাহিনী। জমি দখল করতে স্থানীয়দের উপর গুলি চালাচ্ছে। এখনই তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আইভী ফেরদৌস বলেন, দুপুর ৩টা পর্যন্ত আহত অবস্থায় ৩ জন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছে। এর মধ্যে ২ জন ছররা গুলিবিদ্ধ ছিলো পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত ছিল। এছাড়া আরো একজনের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্নিহ দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, রুপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা শুনেছি। ইতিমধ্যে আমরা পুলিশ ফোর্স পাঠিয়েছি। তাদের কাছ থেকে খবর পেলে বিস্তারিত জানাতে পারবো। এখন আমার কাছে ওই ভাবে কোন তথ্য নেই।
এর আগে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনের রাতেও রফিক ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে হাজী মোতালেব ভূঁইয়া ও দুলাল প্রধানের বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় মামলা হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন সন্ত্রাসীরা।