চট্টগ্রাম
সীতাকুন্ড সলিমপুরে ৬৫পরিবারের উচ্ছেদে গণসংহতি’র ক্ষোভ

পূনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে সরকারের দায়িত্বশীলরা ছলিমপুরে অমানবিক উচ্ছেদে গণসংহতি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সীতাকুণ্ড জঙ্গল ছলিমপুরে হাইকোর্টের রায়কে উপেক্ষিত রেখে ধারাবাহিক ভাবে সরকারের উচ্ছেদ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। এতে গণসংহতি আন্দোলন, সীতাকুণ্ড উপজেলা কমিটির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. অপূর্ব নাথসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্বাক্ষাৎ করেন এবং পরিদর্শন করেছেন উচ্ছেদকৃত এলাকায়। সেখানে নেতৃবৃন্দ এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন সরকারের কর্মকর্তারা গ্যাস লাইনের সংস্কারের কথা বলে এলাকায় স্কেবেটর নিয়ে প্রবেশ করেন। পূর্বে অবগত না করেই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে অভিযান চালিয়ে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে হার্ট ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দ করা জায়গাটি উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন। অথচ উচ্ছেদকৃত এলাকায় এশিয়ান গ্রুপের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়ে কাটা তারের বেষ্টনী দিয়ে দেন। এতে উচ্ছেদকৃত পরিবারে সন্দেহ জন্ম নেয় যে, তারা সরকারের বাহিনী ও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে কেন প্রাইভেট কোন কোম্পানির স্বার্থে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে।
উল্লেখ্য যে, বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে পরিচালিত এই অভিযানে উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর মৌজার বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিএস ৩৬০ ও ৩৬১ দাগের এসব জমি উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এম মারমা, মো. রাজীব হোসেন, এসএমএন জামিউল হিকমা, রাকিবুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন ও সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ। এছাড়া জেলা পুলিশের ২ শতাধিক ফোর্স অভিযানে অংশ নেয়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম রফিকুল ইসলাম জানান, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকার ছিন্নমূল বড়ইতলা ২ নম্বর সমাজ এলাকায় সলিমপুর মৌজার বিএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গাটি দীর্ঘদিন অবৈধ দখল করে রেখে সেখানে শতাধিক বসতি স্থাপন করে দখলদাররা। আমরা সেসব দখলদারকে নিয়ম অনুযায়ী সরে যাবার জন্য বারবার নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা সরেনি। পরে বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসব দখল উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়ায় আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছি। দখল করা স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি জায়গাটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিচ্ছি। যাতে তারা আর দখল করতে না পারে।
তিনি বলেন, এখানে যারা অবৈধ দখলে ছিলো তারা যদি ভূমি পাওয়ার জন্য যথাযথ নিয়মে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে সেক্ষেত্রে কোন সুযোগ থাকলে হয়ত কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে বলে জানান তিনি।
প্রশাসনের বক্তব্য মতে, চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুরে উচ্ছেদ অভিযানে প্রশাসনের ওপর বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করেছে অবৈধ দখলদাররা এতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে ৪ হামলাকারীকে। গত বৃহস্পতিবার জঙ্গল ছলিমপুরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে আসার সময় এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে ফেরার পথে হঠাৎ কয়েক শ’ নারী-পুরুষ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে অতর্কিতভাবে বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে।
এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমিসহ কয়েকজন আহত হই। অতর্কিত ছোড়া পাথর আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এসে পড়ে। আহতরা ভাটিয়ারীর বিএসবিএ হাসপাতাল ও সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এই ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।
একই কথা বলেছেন সীতাকুন্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো.আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, অভিযান শেষ করে ফেরার পথে অতর্কিতভাবে পাহাড়ের আড়াল থেকে কয়েকজন নারী-পুরুষ পাথর ছুঁড়তে থাকে। এতে ইউএনও স্যারসহ কয়েকজন আহত হন।
উপজেলা প্রশাসন ও থানা সূত্রে আরো জানায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গত বছর দখলদারদের উচ্ছেদ করে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে ১০ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে হাসপাতালের জন্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রশাসন কর্তৃক সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টানিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে দখলদাররা পুনরায় উদ্ধারকৃত জমি দখল করে নেয়। আগে উদ্ধারকৃত জমি গত বৃহস্পতিবার পুনরুদ্ধার করতে প্রশাসন আবারো অভিযান চালায়। সকাল ৯টা থেকে চলমান অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন, র্যাব, এপিবিএন, পুলিশ ও আনসারের ২৫০ সদস্য অংশ নেয়।
এক্ষেত্রে গণসংহতি আন্দোলন সীতাকুন্ড উপজেলা কমিটি’র পক্ষে আহবায়ক ইঞ্জি. জাহিদুল আলম আল-জাহিদ বলেন, উচ্ছেদ করতে আসা সরকারি কর্মকর্তারা কেন একটা অভিযান পরিচালনা করতে এসে মিথ্যার আশ্রয় নিল। কেন পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অবহিত করলেন না। কেন তারা সরকারি হাসপাতালের জমি অধিগ্রহণের কথা বলে একটা প্রাইভেট কোম্পানি ❝এশিয়ান গ্রুপের ❞ সাইনবোর্ড লাগালেন বা কার্যত নিরিহ বাস্তুহারা ছিন্নমূল পরিবারকে উচ্ছেদ করে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করলেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অন্যথা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের রোষানলে পড়তে হয় যা কার্যত স্বাভাবিক এবং আগামীতেও নিজেদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করেই কাজ করার দায়বদ্ধতা আছে। এবং হাইকোর্টের রায়কে নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে বলে স্থানীয়দের কাছে জানা গেছে তাও খতিয়ে দেখা দরকার। তাদের দাবি মতে সরকারের এই উচ্ছেদ অভিযান হাইকোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পরিচালনা করা হয়েছে। এটা আমাদেরকে শংকিত করে।
পরিদর্শন শেষে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যুগ্ম-সমন্বয়ক ডা. অপূর্ব নাথ বলেন, বর্তমান জবাবদিহিতা বিহীন সরকার তার প্রশাসনকে জনগণের শত্রুতে পরিণত করেছে। সরকার তার প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় মদদপুষ্ট ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার্থে ভুমিহীন ছিন্নমূল মানুষের বসতভিটা বিনা নোটিশে তাদের আসবাবপত্র উদ্ধারের সুযোগ না দিয়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করেছে, গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলা ও কেন্দ্র নির্বাহী পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে উক্ত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।