অপরাধসিদ্ধিরগঞ্জ

সিদ্ধিরগঞ্জে বেপরোয়া জ্বালানি তেলচোর সিন্ডিকেট

 নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা তেল ডিপো এলাকায় তেল চুরির মহোৎসব চলছে। দীর্ঘদীন ধরে স্থাণীয় প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা চলে আসলেও রহস্যজনক নীরবতায় উৎসাহ পাচ্ছে তেল চোর সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যরা। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্র ছায়ায় স্থানীয় তেল চোর চক্র চোরাই তেলের এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
গোদনাইল পদ্মা অয়েল ডিপোকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের বার্মাশীল এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশকয়েকটি চোরাই তেল চক্র। জ্বালানি তেল অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল ও জিওবি তেল চুরি করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার জ্বালানি তেল খোলাবাজারে বিক্রির জন্য চুরি করলেও পুলিশ রয়েছে নীরব। এই তেল চুরি ব্যবসা করে বার্মাশীল এলাকার অর্ধশত লোক কোটিপতি হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ তেল চুরি ব্যবসা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির এজেন্টশিপ নিয়ে এখনো অনেকেই বৈধ ব্যবসার আড়ালে করছে চোরাই তেলের ব্যবসা। এই তেল চুরিকে কেন্দ্র করে একাধিকবার সংঘাত-সংঘর্ষ ও অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে। তবুও তেল চুরির ব্যবসা বন্ধ হয়নি। ডিপো থেকে ট্যাংকলরি তেল বোঝাই করে গন্তব্যে যাওয়ার পথে ডিপো গেট থেকে শুরু করে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে শতাধিক তেল চোরদের ঘুণ্টি ঘরের সামনে তেল বোঝাই লরিটি থামিয়ে অবাধে তেল চুরি করে নামাচ্ছে। ফলে ডিপো এলাকায় প্রায়শই তীব্র যানযট লেগে যাচ্ছে। ডিপোর প্রবেশদ্বার সড়কটি প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি পদ্মা ডিপোর নিজস্ব সড়ক। প্রতি মাসে এখানে লাখ লাখ লিটার জ্বালানি তেল চুরি হচ্ছে। সম্পূর্ণ বাইরে বিক্রি নিষিদ্ধ বিমানের তেলও অবাধে বিক্রি হচ্ছে। রঙিন কেরোসিনের সঙ্গে এক প্রকার রাসায়নিক সাদা পাউডার মিশিয়ে কেরোসিনের রং সাদা করে অকটেন, পেট্রোল ও জেট-ওয়ানের সঙ্গে মিশিয়ে ভেজাল করে বিভিন্ন পেট্রোলপাম্পসহ বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত করছে ভেজাল তেল।
এলাকাবাসী সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে বার্মাশীল এলাকার অকিলুজ্জামান এর পুত্র রাশেদুজ্জামান অমির রয়েছে একটি বিশাল চোরাই তেল বিক্রির সিন্ডিকেট। ডিপোর সাথে ঘেঁষে তৈরি এ সিন্ডিকেট প্রতিদিন ৭০-৮০ টি ট্যাংকলরী থামিয়ে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল, ফার্নেস অয়েল নিচ্ছে। যার প্রতিদিন আনুমানিক মূল্য কয়েক লাখ টাকা। অমির এ তেলচোর সিন্ডিকেটে রয়েছে জাহিদ প্রধান, রাকিব ভূঁইয়া সহ এলাকার প্রভাবশালী আরো বেশ কয়েকজন। বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানেও বন্ধ হয়নি তাঁদের চোরাই তেল ব্যবসা। প্রতিমাসে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় অর্ধকোটিরও বেশি টাকা।
পদ্মা ডিপোর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) শাহজাহান কবির চৌধুরী জানান, ডিপো এলাকায় ট্যাংকলরী থেকে তেলচুরি বন্ধ করতে আমরা দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে যাচ্ছি। আমি বেশকয়েকবার পুলিশ, ডিবি সহ প্রশাসনকে জানিয়েছি তারা যেনো এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়। আমি আবারও প্রশাসনকে এ বিষয়টির ব্যাপারে অবগত করবো যেনো আমার পদ্মা ডিপো এলাকায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেনো না থাকে।
এদিকে থানা পুলিশ জানিয়েছে, চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে চোরাই তেল ব্যবসায়ীরা গাঁ দিয়েছে। এছাড়া চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকা অনুযায়ী সকল তেলচোরদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানানো হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close