দিনাজপুরে মশিউর রহমান (২২) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি শৌচাগারের দরজায় থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার অপরাধে সোমবার (১৭ অক্টোবর) রাত দুইটার দিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ওই দিনই এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মশিউর নিজেই বঙ্গবন্ধুর ছবিটি শৌচাগারের দরজায় রেখে ছবি তুলে তা ফেসবুকে দিয়েছেন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তার পরিচিতরা। তাদের দাবি, শৌচাগারের দরজায় বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে সচেতন করতেই মশিউর ওই ছবিটি ফেসবুকে দিয়েছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার ফারুক উল আলম বাদী হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই দিন রাত দুইটায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে আটক করে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে তাঁকে ওই মামলায় আটক দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিত্যক্ত টয়লেটের দরজায় জাতির পিতার ছবিটি রেখেছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছাড়ানোর জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিনাজপুর জেলা সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক সদস্য বলেন, মশিউর কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছবিটি পোস্ট করেননি। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে প্রতিবাদ করার জন্য তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার লোকজন তাঁদের সেখানে প্রতিবাদ করতে দেয়নি।
জানা যায়, মশিউর রহমান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দোগাছি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দিনাজপুর আদর্শ কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি। মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত। করোনার সময় এবং দিনাজপুরের গোর এ শহীদ ঈদগাহের জামায়াতে দায়িত্ব পালনে জেলা প্রশাসনের করা স্বেচ্ছাসেবীর তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে।
মশিউর দিনাজপুর জেলা সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য। এই সংগঠনের সদস্যরা জানান, গত রোববার বিকেলে মশিয়র রহমান তাঁর এক বন্ধুর আত্মীয়কে রক্তদানের জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। রক্তদান শেষে ফেরার পথে হাসপাতালের নিচতলায় পরিত্যক্ত টয়লেটের দরজায় জাতির পিতার ছবিটি দেখতে পান। পরে সেটির ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। ক্যাপশনে তিনি লেখেন ‘বিষয়টা খুব দুঃখজনক’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক কাজী শামীম হোসাইন বলেন, তিনি অন্য কোথা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে এসে অসৎ উদ্দেশ্যে সেখানে তা রাখেন। ছবিটি যে জায়গায়, সেখান দিয়ে সব সময় মানুষ যাতায়াত করে। ছবিটি ওই জায়গায় থাকলে কারও চোখে পড়ত। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ওই তরুণ কেন সেখানে ছবিটি রেখেছে, তদন্তকারী সংস্থা তা বের করবে।
এ বিষয়ে মশিউরের মা নাসরিন বেগম জানান, মশিউর কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগীকে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার কাজ করেন। রোগীর জন্য রক্ত দরকার জানিয়ে রাতে পুলিশ ফোন করে মশিউরকে। পরে তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন তাকে পুলিশ আটক করেছে।
দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে মামলার ভিত্তিতে আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।