জাতীয়

এটুআইকে সংস্থা করার উদ্যোগ

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোর উদ্বেগ। তবে আইসিটি বিভাগ বলছে, সংস্থা হলে বেসরকারি খাতের ব্যবসার সুযোগ আরও বাড়বে।

এজেন্সি বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করতে পারবে।

এজেন্সি হিসেবে এটুআই কোম্পানি গঠন বা অন্য প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিতে পারবে।

সরকারের এসপায়ার টু ইনোভেটকে (এটুআই) এজেন্সি টু ইনোভেশন করা হচ্ছে। গত মার্চের শেষে এ বিষয়ে একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে এই খসড়া নিয়ে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা বলছে, এটুআই সরাসরি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করলে দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পের বিকাশমান গতি ব্যাহত হবে। একই সঙ্গে এটুআই সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে। তবে আইসিটি বিভাগ বলছে, এজেন্সি বা সংস্থা হলে বেসরকারি খাতের ব্যবসার সুযোগ আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা নিজেদের আশঙ্কা ও আপত্তির জায়গাগুলো নিয়ে গত ২১ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ বরাবর লিখিত পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের এই সংগঠনগুলো জানিয়েছে, খসড়াটি অনুমোদনের আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। তারা উদ্বেগ জানিয়ে পত্র দেওয়ার পর আইসিটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর তা সংশোধনের সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তারা।’

এটুআই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইউএনডিপির সহায়তায় আইসিটি বিভাগের একটি কর্মসূচি। এটি সংস্থা করাবিষয়ক খসড়া বিলে বলা হয়েছে, নাগরিকবান্ধব ডিজিটাল ও অগ্রসর প্রযুক্তিভিত্তিক সেবাব্যবস্থার উন্নয়ন, উদ্ভাবনী সংস্কৃতির বিকাশ এবং জ্ঞানভিত্তিক সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দেওয়ার জন্য এজেন্সি টু ইনোভেশন (এটুআই) নামে সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

তবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, এটুআই সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। তারা উদ্ভাবনী এজেন্সি হিসেবে তৈরি হবে। এতে বেসরকারি খাতের ব্যবসার সুযোগ আরও বাড়বে। যাঁরা উদ্বেগ জানিয়েছেন, তাঁদের পরামর্শ ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিন বছর ধরে ধাপে ধাপে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আশঙ্কা ও আপত্তি যা নিয়ে

বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্কো ও ই-ক্যাব বলছে, খসড়া আইনের কিছু ধারা ও উপধারা বেসরকারি আইসিটি খাতের কার্যক্রম ও ব্যবসার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া কিছু অস্পষ্টতাও রয়েছে। খসড়ায় বলা আছে, এটুআই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিষয়ে সেবা ও পরামর্শ দিতে পারবে। এই উপধারা সংগঠনগুলোর আপত্তির বড় জায়গা। তারা বলছে, এটুআই নিজেই সেবাদাতা ও পরামর্শক হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে স্থানীয় আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে আইসিটি খাতের একজন সংগঠক বলেন, বিভিন্ন বড় প্রকল্পে অনেক ভেন্ডর থাকে। সেখানে কনসালট্যান্টের জন্যও কোম্পানি নিয়োগ দেওয়া হয়। ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান কিন্তু ওই প্রকল্পের অন্য টেন্ডারে অংশ নিতে পারে না। কিন্তু খসড়া আইনে এটুআই সেবা ও পরামর্শ—দুটিই দিতে পারবে। এখানেই আপত্তি তঁাদের।

এজেন্সি হিসেবে এটুআই কোম্পানি গঠন বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিতে পারবে। সংগঠনগুলো বলছে, এজেন্সি নিজেই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলে তা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্ত প্রতিপক্ষ হবে। পাশাপাশি সরকারের সহায়তাপুষ্ট ও সরকারের ক্রয় কার্যক্রমে এটুআইয়ের একচেটিয়া অংশগ্রহণ বাড়বে এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসার সুযোগ হারাবে।

এটুআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনে যেকোনো সভায় দেশি বা বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। সংগঠনগুলো বলছে, এই ধারার স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন। তারা বলছে, বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদানের জন্য বেসিস, বিসিএস, আইএসপিএবি, বাক্কো এবং ই-ক্যাবই যথেষ্ট।

এজেন্সি তার আয় দিয়ে বিনিয়োগ করতে পারবে এবং সরাসরি বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারবে। কিন্তু সংগঠনগুলো বলছে, এতে বেসরকারি খাতের সুযোগ কমে যাবে। এ ছাড়া এটুআই ব্যক্তি, ফার্ম, কোম্পানি, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বা অংশীদারি ব্যবসায় অংশগ্রহণ ও চুক্তি করতে পারবে।

সেবা বা পরামর্শ প্রদানের বিনিময়ে এটুআই ফি বা চার্জ নিতে পারবে—এই ধারার বিষয়ে সংগঠনগুলো বলছে, এতে সরকারের সব ক্রয়ে তাদের অংশগ্রহণ ও প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, এজেন্সি বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করতে পারবে। বিষয়টি আইন দ্বারা সীমিত করা না গেলে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে বলে মনে করছে পাঁচ সংগঠন।

আইনের কোনো বিধানের অস্পষ্টতার কারণে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে, তা দূর করতে সরকার প্রয়োজনে গেজেট প্রকাশ বা নির্দেশনা দিতে পারবে। তবে সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, এর মাধ্যমে এটুআইকে সীমাহীন স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। এজেন্সির ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকা প্রয়োজন।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট এক সংগঠনের নেতা বলেন, এটুআই যদি এজেন্সি হয়ে টেকসই বিজনেস মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চায়, তাতে আপত্তি নেই। আপত্তি হচ্ছে, একটি সংস্থাকে যেন সব দেওয়া না হয়। তবে আইনে যেসব ধারা উল্লেখ আছে, তাতে এই খাতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে না। সরকারি টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটক বিটিআরসির আইন মেনে চলে। এখানে বিটিআরসি নিজে অপারেটর হয়নি। আর টেলিটকও বাড়তি সুবিধা পায় না।

এজেন্সি টু ইনোভেশন আইনের খসড়া প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছি। আইসিটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close