জাতীয়নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে হরিজন সম্প্রদায়ের ২০ পরিবারের অভিযোগ

ভোরের আলো ফোটার আগে নগরকে পরিষ্কার করে সৌন্দর্যমন্ডিত করে তুলে হরিজন সম্প্রদায়। হরিজনরা মূলত ঝাড়ুদার, মেথর, ডোম ও নোংরা পরিষ্কারের কাজ করে। যারা না থাকলে হয়তো এ গোটা নগর ময়লারস্তপে পরিনত হত। ফলে পরিবেশ নোংরা হওয়ার কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তো এ নগর। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, সেই হরিজনদেরই আমরা তথা এসমাজ সব চেয়ে বেশি অবহেলা করে। শুধুমাত্র সাধারন মানুষ কিংবা সমাজই নয়, এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকেও সেইধরনের অবহেলা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন হরিজন সম্প্রদায়।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে হরিজন সম্প্রদায়ের একটা বৃহৎ অংশ নগর পরিচ্ছন্নতায় কাজ করে। এদের মধ্যে শহরের ১৫নং ওয়ার্ডের বিদাস রোড এলাকায় বইলখানা হরিজন সিটি কলোনীতে থাকে প্রায় বিশটি পরিবার। তারা এখানে থাকছেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। সম্পূর্ণ জরাজীর্ণ এ কলোনীতে প্রায় হাটু পরিমান নোংরা পানিতে বড় কষ্ট করে থেকেছেন তারা। বার বার মেয়র কিংবা স্থানীয় কাউন্সিলর কাছে ধর্না দিয়েছেন পানি নিষ্কাষণ কিংবা কলোনীটি ঠিক করার জন্য। দীর্ঘ ৫ বছর এই নোংরা পানিতে দুর্বিসহ জীবন যাপনের পর হঠাৎই যেন টনক নড়ে নাসিক কর্তৃপক্ষের। তারা এই ২০টি হরিজন পরিবারদের কথা দেন এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে দিবেন। তবে ভবন নির্মাণের আগ পর্যন্ত এ ২০টি পরিবারকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়। কোন প্রকার পুণর্বাসন ছাড়াই এই পরিবারগুলোকে ২০১৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর কলোনী থেকে উচ্ছেদ করে এবং একই বছর ২৩ অক্টোবর কলোনীতে ২ টি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তুর উদ্বোধন করেন নাসিক মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী। বহুতল ভবন দুটির নাম রাখা হয় ‘সিটি তরুলতা-১, সিটি তরুলতা-২।’ ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপনকালে মেয়র কথা দিয়েছিলেন, দ্রæত ভবন নির্মাণ করে ওই ২০ পরিবারকে এখানে পুণর্বাসন করা হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণ হওয়ার পর পাল্টে যায় সেই বক্তব্য।

চলতি বছরের চলতি মাসে ভবন দুটির কাজ শেষ হলেও এখনও পুণর্বাসন করা হয়নি সেই ২০ পরিবারকে। বলা হচ্ছে, এ ভবণে পুনর্বাসন করা হলে ফ্ল্যাট প্রতি ৫ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে।

এ বিষয়ে বইলখানা হরিজন সিটি কলোনীর সুরোজ দাস বলেন, আমরা ভবন নির্মাণের আশায় এ ৫টি বছর বহু কষ্ট করেছি। খেয়ে না খেয়ে বাসাভাড়া দিয়ে চলেছি। সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা বেতন পাই ৪ হাজার টাকা মাসে। কিন্তু আমাদের প্রতিমাসে বাসাভাড়াই দেয়া লাগে ৫ হাজার টাকা। এখন যদি আবার বলে ফ্ল্যাটে থাকতে হলে সিটি কর্পোরেশনকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে, তাহলে আমার উপর এটা হবে জুলুম।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্ল্যাটের ভাড়া নিতে নিষেধ করেছে। অথচ আমাদের সিটি কর্পোরেশন আমাদের কাছ থেকে ভাড়া চাচ্ছে। এটা কেমন হলো? তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই মানছেন না। তারা কি প্রধানমন্ত্রীরও উপরে? আমরা এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এই কলোনীর বাবু লাল বলেন, আমরা এখানে সেই ব্রিটিশ আমল আছি। আমার বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ এখানে ছিলো। ময়লা পানিতে বহুকষ্ট করে আমরা এখানে জীবন যাপন করতাম। সাপ- পোকের সাথে লড়াই করে চলেছি। এত কষ্ট করেছি বুঝাতে পারবো না। তারা (নাসিক) আমাদের বহুতল ভবনের কথা বলে এখান (কলোনী) থেকে সরিয়েছে। কিন্তু আজ ভবন হওয়ার পরে তারা আমাদের সাথে তালবাহানা করছে। আমরাতো বড়লোক না যে প্রতিমাসে তাদেরকে ৫ হাজার টাকা করে দিতে পারবো। আমাদের বেতনইতো কম, এটা দিয়ে সংসার, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচও তো চলেনা। আমরা এখন কোথায় যাবো?

মানু লাল বলেন, মেয়রতো আমাদের কোন কথাই শুনতে চায় না। আমাদের সাথে দূর দূর করে। তিনি বলেন, ভাড়া দিয়ে থাকলে থাকো, না থাকলে নাই। সে আমাদের অনেক অবহেলা করে। আমরা কি মানুষ না? এখন আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি ছাড়া এখন আর আমাদের কেউ নাই।

এদিকে ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে বারণ করেছেন। তিনি ওই দিন একনেকের একটি সভায় এ কথা বলেন। তবে তার এ বারণ নাসিক মানছেনা বলে বার বার অভিযোগ করেই চলেছেন নাসিকের হরিজন সম্প্রদায়।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নীতিমালা অনুযায়ীই যারা যারা ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাবেন তাদেরকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। সেই নীতিমালায় যদি ভাড়ার কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে ভাড়া দিতে হবে। কেউ যদি না জেনে আগে থেকেই অভিযোগ করে তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close