জেলা/উপজেলানারায়ণগঞ্জনারায়ণগঞ্জ সদরসিদ্ধিরগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা

চাল, ডাল, পিঁয়াজ,মুরগি, ডিম, ভোজ্যতেল ও সবজিতে ঊর্ধ্বগতি

আহসানুল হাবিব সোহাগ, সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : করোনাকালে  নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি ও চালসহ পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহের কথা বলা হলেও লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি,  ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
একদিকে করোনার প্রভাবে কর্মহীন মানুষ, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের  লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত। নারায়ণগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাজারে চাল,ডাল,তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রয়োজনীয় আরও কয়েকটি পণ্যের দাম প্রায় কয়েকমাস মাস ধরেই চড়া। সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, আলু, পিয়াজ, ডিম, মুরগিসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। চালের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫টাকা, পিঁয়াজে ১০ টাকা, আলুতে ৪ থেকে ৫ টাকা, ডিম প্রতিডজনে ১৫ টাকা, মুরগি প্রতিকেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের  বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের দ্বিগুবাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ, আদমজী, চিটাগাংরোড বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে কেজিতে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পিয়াজ এক লাফে উঠেছে ৪০ টাকায়। পাইকারিতেও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। পিয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে নতুন আলুর। খুচরা বাজারে এক কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। কয়েক দফা কমে যা দুদিন আগে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আলু ও পিয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে বয়লার মুরগি ও ডিমের। গত সপ্তাহে ৮৫ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিমের দাম বেড়ে এক লাফে ১০০ টাকা হয়েছে। আর ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ১৪০-১৫০ টাকা হয়েছে। ৩ থেকে ৪ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের চালে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল ৩ হাজার ১০০ শত টাকা থেকে ৩ হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলেন, দুই মাস ধরে চালের দাম উঠানামা করছে। কখনও বাড়ছে আবার কখনও কমছে। কিছুদিন চালের দাম স্থির থাকলেও এখন আবার চালের দাম বেড়ে গেছে। সব ধরনের চাল ৩ থেকে ৫টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০টাকা থেকে ৩ হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত। প্রকারভেদে আরও সব ধরনের চালের দাম বেশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। খোলা ভোজ্যতেল লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। আর বোতলজাত ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে কোম্পানী ভেদে ৬৩০ থেকে ৭০০ টাকা দামে। শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহে সবজির দামে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ৩০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। ১০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। হঠাৎ সবজির দাম বাড়লেও গাজর, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো গাজরের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে লাউয়ের দাম কিছুটা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকার মধ্যে। বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, বকরির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, গরুর মাংস ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকায়, মহিষ ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাজারে প্রতিকেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৬০০ টাকা, প্রতি এক কেজি শিং মাছ (আকার ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি শিং ৮০০ থেকে ১০০০, মৃগেল ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, ইলিশ প্রতিকেজি (আকার ভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ি প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতিকেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকায়, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, পোয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, টাটকিনি মাছ ১০০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৪০ টাকায়, সিলভার কার্প ১০০ থেকে ১৪০ টাকায়, দেশি কৈ ১৫০ থেকে ৭০০ টাকায়, কাঁচকি ও মলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, আইড় মাছ ৫০০, রিঠা মাছ ৫০০ ও কোরাল ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, ছোট বেলে ১২০, রূপচাঁদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির ফলে নারায়ণগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বাজারে কোনো পণ্যের দামই ‘স্বস্তিকর নয়’ বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে পাইকারি পর্যায়ে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। রবিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের দ্বিগুবাবু বাজারে বাজার দর নিয়ে জানতে চাওয়া হয় নুরুল আলম নামের একজন ক্রেতার কাছে। তিনি বলেন, “বাজারে এখন সব পণ্যের দামই চড়া। নির্দিষ্ট করে কোনো পণ্যের কথা বলা যাবে না। এক কথায় বলতে হবে নিত্যপণ্যের কেনাকাটায় নাগরিকদের খরচ বেড়ে গেছে। এটা আসলেই কষ্টকর।”সবজি বিক্রেতা জালাল আহমেদ বলেন, মুলা ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম চড়া। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও পাইকারিতে দাম অনেক বেশি।
Tags

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close