খেলাধুলাজাতীয়নারায়ণগঞ্জফতুল্লাসারাদেশ

অস্তিত্ব সংকটে ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম

খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, আইসিসি অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মাঠ। মাঠটি নারায়ণগঞ্জকে আন্তজার্তিক পর্যায়ে পরিচিতি এনে দিয়েছে।

কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, বছরের পর বছর পানিতে নিমজ্জিত থাকায় স্টেডিয়ামটির ভেতরে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেলায়ও মাঠের ভেতর উঁকি দিতেও কেউ যায় না। আর সন্ধ্যা নামতেই মাঠের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে পথচারীদের গা শিউরে উঠে।

 

অথচ এমন একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু চোখের সামনে নস্ট হয়ে যাচ্ছে, দেখার যেন কেউ নেই। জেলার নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের দাবি, অচিরেই যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঠের দিকে নজর দেয়। না হলে একদিন ঐতিহ্য হারাবে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। সংকটে পড়বে তার অস্তিত্ব।

 

সরজমিনে স্টেডিয়ামের চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, মাঠের চারদিকে জলাবদ্ধতা আর জলজ উদ্ভিদ। দেখে মনে হবে যেন এক টুকরো দ্বীপ। কলকারখানার বিষাক্ত ক্যামিকেল যুক্ত পানি থৈ থৈ করছে। ঝোপ-জঙ্গলে ছেঁয়ে গেছে চারপাশ। স্টেডিয়ামের লিংক রোড সংলগ্ন গেইট দিয়ে প্রবেশের শুরুতেই দেখা যায় ময়লার স্তুপ।

 

পানি নিষ্কাশনের ক্যানেলটিও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। রাস্তার পাশে থাকা ড্রেন থেকে মানুষের মল এই রাস্তার ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে। বছরের পর বছর এভাবেই আটকে আছে পানি। জমে থাকা পানি এখন নানা পোকামাকড় আর মশার আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে। দূর্গন্ধের পাশাপাশি ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু। স্টেডিয়ামের পাঁচটি প্রবেশ পথের চারটি পানিতে।

 

প্রায় পুরো বছরই পানির নিচে থাকে স্টেডিয়াম। কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও নির্মিত এই স্টেডিয়ামটির অবকাঠামো পরিনত হচ্ছে ধ্বংস স্তূপে। স্টেডিয়ামের কমেন্ট্রি বক্স ও অন্যান্য স্থাপনার গ্যাসগুলো ভাঙাচোরা। গ্যালারিতে দর্শকদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর ছাউনি কবে ভেঙে গেছে বছর দুয়েক পূর্বে।

 

স্টেডিয়ামটির দক্ষিণ পাশেই অবস্থিত ইনডোর। ইনডোরের ও বেশিরভাগ কাঠামো ভেঙ্গে গেছে। প্রেসবক্স ও কমেন্ট্রি বক্সে লাগানো এসিগুলো কার্যক্রম অকেজো হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ আসবাবপত্রে ধরেছে মরিচা। নষ্ট হয়েছে পানির ব্যবস্থাপনা।

 

২৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ঐ বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যেই সংস্কার করা হয়েছিল এই মাঠটি। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এই মাঠে ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তানের মধ্যে একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হয়েছিল।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতার অন্যতম প্রধান ক্রিকেট মাঠ। ২০০৬ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় স্টেডিয়ামটির টেস্টের ইতিহাস। ২০১৫ সালের বাংলাদেশ বনাম ভারতের টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ এই মাঠে খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের। তবে জলাবদ্ধতার কারণে পন্ড হয়েছিল এই ম্যাচটি।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার স্টেডিয়ামটির নাজুক অবস্থা ফলাও ভাবে প্রকাশিত হওয়ায় বিশে^র দরবারে লজ্জিত হয় জেলার ভাবমূর্তি। স্টেডিয়ামটি জেলার জন্য গৌরব বয়ে আনলেও সময়ের বিবর্তনে স্টেডিয়ামটি এখন লজ্জার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

বছরের বেশীর ভাগ সময় এই স্টেডিয়ামটি পানি ও কচুরি পানার নিচে নিমজ্জিত থাকে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। অযত্নে অবহেলায় বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতাসহ অবকাঠামো গুলো ভঙ্গুর হয়ে গেলেও তা সংস্কারে কার্যকরি উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের।

 

ক্রিড়াবিদ মোসলে উদ্দিন জানায়, কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অযত্নের কারনে স্টেডিয়ামটি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্টেডিয়াম জুড়ে তৈরী হয়েছে ময়লা ও কচুরিপানার সয়লাভ। কর্তৃপক্ষ যদি একটু সতর্ক হলে এমন দশা হতো না।

এবিষয়ে নারায়নগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের ক্রিকেটার নাফিজ বলেন, স্টেডিয়ামটি জুড়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি দেখে হতাশা ছাড়া আর কোন উপলব্দি আসে না। ইনডোরে জাতীয় লিগ হতো আর আউট ডোরে নারায়নঞ্জের ডিভিশন লিগ হতো কিন্তু পুরো মাঠে পানি জমে থাকায় এখন কোন খেলা হয় না।

তাই খেলার উপযোগী করার জন্য কর্তৃপক্ষের মাঠটি সংস্কার করা উচিত। আর এভাবেই থাকলে স্টেডিয়ামটির আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মান নষ্ট হয়ে পড়বে না?

এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা এ জেড এম ইসমাঈল বাবুল বলেন, দুর্নীতি আর অপরিকল্পিত ভাবে নির্মানের কারনেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কয়েক বছর আগে ক্রীড়া মন্ত্রী মাঠটি পরিদর্শন করেছেন।

 

এছাড়াও বুয়েট থেকে ৭/৮ জনের একটি প্রকৌশলী দল এই মাঠে এসেছেন। তারা মাঠের উন্নয়েন একটি প্রজেক্ট তৈরি করে অফিসে পাঠিয়েছিলো। সেখান থেকে ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি অতি শীঘ্রই মাঠটি সংস্কারে জন্য একটা বাজেট পাশ করা হবে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close