খুলনা বিভাগজাতীয়রাজনীতি

খুলনায় বাস-লঞ্চ বন্ধ, বিএনপির নেতা-কর্মীরা ট্রেন-ট্রলারে পৌছেছেন সমাবেশে

খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে চলছে পরিবহন ও লঞ্চ ধর্মঘট। এতে বিপাকে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। ফলে বিভিন্ন কৌশলে খুলনায় প্রবেশ করছেন তারা। সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাতে ট্রেন ও ট্রলারে করে খুলনায় পৌছেছেন নেতা-কর্মীরা।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও মেহেরপুর থেকে তারা ট্রেনে খুলনায় আসছেন। নড়াইল, সাতক্ষীরা, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা এলাকার নেতা-কর্মীরা ট্রলার, ইজিবাইকসহ নানা কৌশলে খুলনায় প্রবেশ করছেন।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস খুলনা স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ট্রেন থামা মাত্রই কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার নেতা-কর্মীরা মিছিল-স্লোগান দিতে দিতে প্ল্যাটফর্ম হয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দেন।

চুয়াডাঙ্গা পারকৃষ্ণপুর মদনা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক বিপ্লব বলেন, তিন দিন আগে স্টেশনে যাই, কিন্তু টিকিট দেয়নি। আমরা বলেছি, বিভাগীয় সমাবেশে প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে যাব। আজ রাতে ট্রেনে এসেছি। খুলনায় আসার পথে দুর্বৃত্তরা ট্রেন পাথর নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

দর্শনা পৌরসভার যুবদল সাবেক সভাপতি মুকুল সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, পৌর ও ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার লোক নিয়ে এই গণসমাবেশ সফলে খুলনায় এসেছি। সবাই ট্রেনের টিকিট কেটেই এসেছি। পুলিশ বাধা দিয়েছে, অনেককে নামিয়ে দিয়েছে। সব বাধা উপেক্ষা করে আমরা খুলনায় এসেছি।

বিএনপি কর্মী আহসান হাবিব লিটন বলেন, আমরা বাস ঠিক করেছিলাম আসার জন্য। কিন্তু সরকারের নির্দেশনায় বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শত বাধার মধ্যেও আমরা ট্রেনে করে এসেছি। আমরা সমাবেশস্থলে অবস্থান নেব। এতো মানুষের তো আর হোটেলে থাকা সম্ভব নয়।

কুষ্টিয়ার বিএনপি কর্মী সোহেল বলেন, বাস বন্ধ থাকায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী ট্রেনে এসেছেন। আগেও অনেকে এসেছেন। আরও আসছেন।

কয়রা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হাসান জানান, খুলনা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরবর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলা থেকে খুলনার সমাবেশে যোগ দিতে ট্রলারে নদীপথে রাতে রওনা দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে অনেক নেতা-কর্মী রয়েছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, বাধা উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা খুলনায় আসছেন। কোনোভাবেই গণসমাবেশ ঠেকানো যাবে না। যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করা হবে।

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি সজিব রহমান জানিয়েছেন, সমাবেশে যোগ দিতে নড়াইল থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে কৌশলে খুলনার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন ।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উপজেলার নেতা-কর্মীরা ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ভ্যান, ট্রলারে করে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন। নড়াইল জেলা থেকে ১২ হাজারের মতো নেতা-কর্মী খুলনার মহাসমাবেশে সকাল নাগাদ যোগ দেবেন।

এদিকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে শুরু হয় সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ। তার আগে সমাবেশস্থলে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় নেতা-কর্মীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। সেখানে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, দুপুরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, শনিবার দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনদাবির সমর্থনে আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সহকর্মী হত্যার বিচার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, সমাবেশকে বানচাল করতে বিভাগজুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বৃহস্পতিবার সারারাত অভিযান চালিয়ে ৬০ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close